আল জাজিরা-এপির কার্যালয় ভবন গুঁড়িয়ে দিল ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত একটি ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। কাতারভিত্তিক আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ছিলো এতে। ছিল কিছু আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টও।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ভবনটি পুরোপুরি গুড়িয়ে গেছে। তবে এই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শনিবার সন্ধ্যায় আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে গাজার ১১তলা বিশিষ্ট আল-জালা ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

আল জাজিরার লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় মুহূর্তেই ভবনটি ধসে পড়ে। তখন ধ্বংসস্তূপ থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছিল।

গাজা থেকে নিয়মিত রিপোর্ট করতে থাকা আল জাজিরার সাংবাদিক হ্যারি ফাওসেট আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এটা আমাদের সবার জন্যই ভীষণ ব্যক্তিগত মুহূর্ত। এখানে যা যেভাবে ঘটেছে, তা আমরা কখনো ভাবতেও পারি না।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল জাজিরার সাংবাদিক সাওফাত আল-কাহলৌত বলেন, ভবনটির এক বাসিন্দা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি সতর্ক বার্তা পান। হামলার আধঘণ্টা আগে ওই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর অনেকেই ভবনটি থেকে বের হয়ে যান। ওই সময়ে ভবনটিতে থাকা আল কাহলুত জানান তিনি ও তার সহকর্মীরা মিলে যতটুক পারা যায় তত সরঞ্জাম নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসেন।

অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ভবনটিতে আঘাত হানে জানিয়ে আল কাহলুত বলেন তিনি গত ১১ বছর ধরে ওই ভবনে কাজ করেছেন। প্রায়ই তিনি এর ছাদ থেকে লাইভ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বহু ঘটনা এই ভবন থেকে কাভার করেছি। সহকর্মীদের সঙ্গে আমার সেখানে বহু ভালো স্মৃতি রয়েছে।’

তবে এমন বিপর্যয়কর ঘটনা সত্ত্বেও সংবাদ পরিবেশনে আল জাজিরার সাংবাদিকরা থামেননি জানিয়ে তিনি বলেন, এতো মন খারাপ সত্ত্বেও আমাদের কোনো সহকর্মী এক সেকেন্ডের জন্যও থামেননি—বরং খবর পরিবেশনের বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছেন তারা।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ষষ্ঠ দিনের মতো গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। তারা শনিবার সকালে গাজার একটি শরণার্থী শিবিরেও বোমা হামলা করেছে। এতে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৮ জনই শিশু। আর গত ১০ মে থেকে শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় মোট ১৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৯ জনই শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৫০ জন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার অনেক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শনিবার সকালেও উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আরও মরদেহ পড়ে আছে।

এদিকে, গাজায় হামলার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ করায় সেখানে অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে মেরেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের আক্রমণে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহতও হয়েছেন সেখানে। এমনকি ইসরায়েলনিয়ন্ত্রিত হাইফা শহরে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভেও গুলি চালানো হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি অভিনেত্রী মাইশা আবদ এলহাদিসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার জবাবে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও রকেট ছোড়া অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর রামাত গান, দক্ষিণাঞ্চলের আশকেলন ও আশদোদ শহরের দিকে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। এতে এক ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত হামাসের রকেট হামলায় নয় ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)