সাতক্ষীরায় ছেলেরা কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় বাবার মৃত্যুঃ পারবেনা দেখতে
ডেস্ক রিপোর্টঃ
সাতক্ষীরা শহরের হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা আপন তিন ভাই। তারা যখন কোয়ারেন্টাইনে তখন বাড়িতে মারা গেলেন বাবা। মর্মান্তিক এ খবরে চোখের জলে ভাসছেন কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত তিন ভাই।ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই তিন ব্যক্তি হলেন- চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার সমিতিরহাট ইউনিয়নের উত্তর নিশিন্তাপুর গ্রামের রশিদ আহম্মেদ (৩৮), আব্দুল মালেক (৩৪) ও জাবেদুল ইসলাম (২৬)। তাদের সদ্যমৃত বাবার নাম জহিরুল ইসলাম। শনিবার (৮ মে) দুপুর আড়াইটায় তিনি মারা যান।
গত ৫ মে একত্রে ভারত থেকে যশোর জেলার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেন ওই তিন ভাই। সেখান থেকে তাদের সাতক্ষীরা শহরের আবুল কাশেম হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠায় প্রশাসন। তাদের মধ্যে মধ্যে অসুস্থ আব্দুল মালেক হুইল চেয়ারে চলাচল করেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা জাবেদুল ইসলাম বলেন, আমরা তিন ভাই এক বোন। গত দুই মাস আগে দুর্ঘটনায় আহত মেঝো ভাই আব্দুল মালেককে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে লকডাউন শুরু হওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ৫ মে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করলে আমাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করা হয়। আজ (শনিবার) বেলা আড়াইটার দিকে বাড়িতে অসুস্থ বাবা মারা গেছেন। ফোনের মাধ্যমে এ খবর জেনেছি। বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। তিনি বলেন, একমাত্র বোন কোহিনুর আক্তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে রওনা হয়েছে। আমরা তিন ভাই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি। আমরা বাবাকে শেষ দেখাটুকু দেখতে চাই। আপনারা একটু ব্যবস্থা করেন। ডিসি স্যারকে ফোন দিলে ফোন ধরছেন না। খুব অসহায় হয়ে পড়েছি বলে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার সমিতিরহাট ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন জানান, সাতক্ষীরায় যে তিনজন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তারা আমার চাচাতো ভাই। চাচা জহিরুল ইসলাম আজ দুপুর আড়াইটার দিকে মারা গেছেন। ছেলেদের কাছে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তিন ছেলে সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। লাশের জানাজার ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না আমরা।
সমিতিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানান, আমি এখন ওই বাড়িতে রয়েছি। একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। ছেলেরা সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টাইনে, কেউ বাড়িতে নেই। এলাকার মানুষ খুব ব্যথিত। প্রশাসন যেন ছেলেদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তাদের বাবাকে শেষ দেখার সুযোগ দেওয়ার দাবি করছি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস. এম মোস্তফা কামাল বলেন, কোয়ারেন্টাইনে যারা রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই ভারত থেকে এসেছেন। ছেড়ে দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের বাবা মারা গেছেন বলে আমিও শুনেছি। তবে তাদের যেতে দেওয়া হবে না।