অনিয়মের সংবাদ প্রকাশে বদলী হলেন কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত আলীর বিরুদ্ধে দৈনিক সাতক্ষীরা পত্রিকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশের পর জেলা পুলিশ সুপার তাকে বদলী করেছেন।
তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার পর একজন সাংবাদিক ফোন করলে অকথ্য ভাষায় কথাও বলেন তিনি। তার কয়েকটি কল রেকর্ড ইতিমধ্যে দৈনিক সাতক্ষীরা পত্রিকার হাতে এসে পৌছেছে।
একজন সাংবাদিক তার কাছে ফোন করলে তিনি যেসব কথা বলেছেন সেগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো।উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত বলেন, পেপার পত্রিকায় ভালোই লিখছো আমার নামে। যত পারো লেখো সমস্যা নেই। লেখবা লেখলে কি বাল হয় ওতে। ও কাগজে যা লেখছে আমার (খারাপ ভাষা) টিস্যু হিসেবে ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছি। ওতে আমার (খারাপ কথা) হবে। তুমি এই রেকর্ডটা সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের শুনিয়ে দাও। এমন দম্ভ করে কথা বলেন উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত আলী। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীরা উপ-পরিদর্শক জিয়ারাতের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের জনৈক সাঈদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক মাস পূর্বে তার চাচাতো ভাইদের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মারামারি হয়। ওই সময়ে উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে নির্যাতন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন জিয়ারাত। এসময় পুলিশের একজন সদস্য জিয়ারতের কথায় রাজি না হওয়ার জন্য তাকে বলেন। ওই সদস্য আরও বলেন, ওসি স্যারের সাথে কথা হয়েছে আপনাকে সন্ধ্যার পর ছেড়ে দিবে। কালিগঞ্জ থানার সবচেয়ে খারাপ অফিসার জিয়ারাত। তার কথা এখন মেনে নেন। ওসি স্যার আসলে আপনাকে এমনিতেই ছেড়ে দিবে।
ওই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওসি তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্ত ওই সময়ে জিয়ারাত তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, নেতা-গোতা নিয়ে এসে টাকা না দিয়ে থানা থেকে চলে যাচ্ছিস যা, তবে তোকে ইয়াবা দিয়ে আটক করবো। দেখি তোর কে আছে।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে একটি অডিও রেকর্ড আসে যাতে জিয়ারাত ও অন্য আরেকজন পুলিশ কনেস্টেবলের কথাপোকথন শোনা যাচ্ছে। ওই রেকর্ডে উল্লেখ আছে, ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার কথা। কিন্তু জিয়ারাত বলেন, অত টাকা আমি পাইনি। থানায় তো সবকিছু একার দ্বারা সম্ভব না। ওসি সাহেব আছে সার্কেল সাহেব আছে তাদেরও একটা বিষয় থাকে। থানায় চাকরি করে তাদের কথা না শুনলে চাকরি করবো কিভাবে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপ-পরিদর্শক জিয়ারাতের নামে ৬ টি বিভাগীয় মামলা চলছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অগাধ সম্পত্তি। একজন কনেস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে এত টাকার উৎস কোথায় প্রশ্ন জনমনে।
হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন সময়ে জমি জায়গার বিষয় নিয়ে থানার ভিতরে বিচার বসাতে দেখা যায় তাকে। একটি পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমি জায়গা দখল করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার রাতে কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ড্যামরাইল গ্রামের মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে যেয়ে তাকে এবং তার ছেলে সরোজিত, মনোরঞ্জন মন্ডলের বড় ছেলে ভাইরা ভাই শ্যামনগর উপজেলার উপজেলার কাচড়াহাঁটি গ্রামের রাধা কান্ত মন্ডলের ছেলে কমলেশ মন্ডল, স্থানীয় দেবেন ও সুভাষকে আটক করে জিয়ারাত।
তবে ঘটনাস্থল থেকে মনোরঞ্জনকে ছেড়ে দেয় হয়। ওই সময়ে গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে বাবু নামে এক যুবক তাদের আটকের কারণ জিজ্ঞাসা করলে উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত তাদেরকে তক্ষক সাপের ব্যবসায়ী, কখনো মাদক ব্যবসায়ী আবার কখনো জুয়াড়ী বলে দাবি করেন।
একপর্যায়ে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন উপ-পরিদর্শক জিয়ারত আলী। পরে এক গ্রাম পুলিশের কাছে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সর্বশেষ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেবেন, সুভাষ ও সরোজিতকে ছেড়ে দিলেও কমলেশকে ভারতীয় নাগরিক বলে কারাগারে প্রেরণ করেন। অথচ কমলেশ মন্ডল বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটে সার্চ করলেই বেরিয়ে আসছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র। উপ-পরিদর্শক জিয়ারাতকে টাকা না দেওয়ায় তাকে বানানো হলো ভারতের বাসিন্দা।
গত বৃহস্পতিবার কমলেশ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। যদিও তদন্তে নেমে গোয়ন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সত্যতা পান। তারই আলোকে জিয়ারত হোসেনকে ষ্টাণ্ড রিলিজ করা হয়।
এব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা ফারুক হোসেন কমলেশকে তার এলাকার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন।
উপ-পরিদর্শক জিয়ারাত আলীর কাছে ফোন দিলে তিনি সরাসরি থানায় এসে সাংবাদিকদের তার কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে বলে জানান। মোবাইল ফোনে কোন প্রকার কথা বলতে অপরগতা জানান তিনি।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন জিয়ারত আলীর বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপ-পরিদর্শক জিয়ারতের অকথ্য ভাষায় কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে কি গালাগাল করেছে আমি শুনবো কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিব।