পারকুমিরা ৭৯জন মুক্তিকামীকে হত্যা- এখনো তৈরী হয়নি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
নিজস্ব প্রতিনিধি:
১৯৭১ সালে মুক্তিকামী ৭৯জনকে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পাকসেনা ও রাজাকাররা তালার পার কুমিরা নামক স্থানে। এরমধ্যে ৪৯জনের লাশ পারকুমিরার বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। বাকি কয়েকজন শহীদদের লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। এদিন কাশিপুর গ্রামের শেখ হায়দার আলীকে পাকসেনারা গায়ে পাট জড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে।
প্রকাশ, সেদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের কয়েকজন হলেন-তালা উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের শেখ আব্দুর রহমান, শেখ আলাউদ্দীন, শেখ সামছুর রহমান, শেখ বদরুদ্দীন, মো. সালমত আলী, শেখ ফয়জুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, শেখ বিলায়েত আলী, সাজ্জাত আলী প্রমুখ। শহীদদের অনেককেই পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। বাকী যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি ঐ সময় তাদেরকে পারকুমিরার ঐ বধ্যভূমিতে গণকবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মতিলাল কুন্ড, ননীলাল কুন্ড, দীলিপ কুন্ড, ডা. মণিন্দ্রনাথ সরকার, মুরারীমোহন কুন্ড,গোষ্ঠ কুন্ড, গোপাল কুন্ড, শচীন দে, মোহনলাল কুন্ড, রণজিৎ কুন্ড, খোকন কুন্ড, জীবন কুন্ড, বিমল কুন্ড, মনোরঞ্জন কুন্ড, খগেন কুন্ড, ফ্যাকা কুন্ড, ননী কুন্ড, দীলিপ কুন্ড, গোবিন্দ কুন্ড, কানাইলাল কুন্ড, প্রতিমা কুন্ড, মনোঞ্জন কুন্ড, হারাধন কুন্ড, শৈলেন কুন্ড, কৃষ্ণভূষণ কুন্ড, গোষ্ঠ বিহারী কুন্ড, পাগল কুন্ড, নিমাই সাধু, হায়দার আলী, আবদুর রউফ বিশ্বাস, দীনবন্ধু সরদার, অনীল দাস, ষষ্টিপদ কুন্ড, সাজ্জাদ আলী শেখ, হরিবিলাস দত্ত, হাজু ঋষি, মহেন্দ্রনাথ সরকার, পরিমলসহ অনেকেরই পরিচয় পাওয়া যায়।
শহীদ পরিবারের সন্তান তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম সেদিনের সেই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। মসজিদে জুম্মার আযান হচ্ছিল। এ সময় পাটকেলঘাটা থেকে পাকিস্তানী হায়নারা পারকুমিরায় গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে আলোচনার কথা বলে একত্রিত করে। এসময় সহজ সরল গ্রামবাসীর উপর ব্রাশফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ৭৯জন নিহত হয়। এদের মধ্যে যশোর নওয়াপাড়া, খুলনার ফুলতলা, চুকনগর, ডুমুরিয়া, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার আশ্রয় সন্ধানে আশা শরণার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন কমান্ডার মো. মফিজ উদ্দীন বলেন, বর্তমান সরকার পার কুমিরায় শহীদ হওয়া বীর শহীদদের গণকবর রক্ষার্থে সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত স্থানে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।
১৯৯২ সালের ২৪ মে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার কাশীপুরে আসেন। পারকুমিরার এ ঘটনা জেনে তিনি সরুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য সংরক্ষণ করা হয়নি পারকুমিরা গণকবরটি। নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ।
পাকহানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদরদের বর্বরতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা নতুন প্রজন্মর কাছে তুলে ধরতে পারকুমিরা গণকবরটি সংরক্ষণ ও একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে সরকার খুব শিগগির উদ্যোগ নেবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার, আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, “পারকুমিরায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যখন যুদ্ধ হয়েছিল তখন পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় মুক্তিকামী মানুষসহ ৬০-৭০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে একটি গণকবর দেওয়া হয়”দেশ স্বাধীনের পর গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য দাবি করেছি। সরকারও সম্মত হয়েছিল। আগামীতে নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে পারে সেজন্য পারকুমিরায় একটি গণকবর ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রতি সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। এ জন্য জেলার সকল গণকবরগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণে এলজিইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।