হিন্দু ছাত্রীকে ধর্মান্তরঃসাতক্ষীরার শ্যামনগরের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ সাময়িক বরখাস্ত
রঘুনাথ খাঁঃ
হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নাবালিকা ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্মান্তিরত করে বিয়ে করার অভিযোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক শামীম আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত
করা হবে না তা জানতে চেয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ভিকটিমকে উদ্ধারের দাবি
জানিয়ে শনিবার বিকেল ৪টায় নূরনগর বাজারে এক মানববন্ধন কর্মসুচির ডাক দিয়েছে সুরক্ষা
নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা (সুনাম) কমিটির শ্যামনগর শাখা।
শ্যামনগর উপজেলার নূরনগর গ্রামের এক মুদি ব্যবসায়ি জানান, ২০১৯ সালে তার মেয়ে নূরনগর
আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে। ওই বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক
শামীম আহমেদ(৪৮) তাকে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতার কাজে সহযোগিতা করতো।
আসতো তাদের বাড়িতে। ২০১৯ সালেই কার্টুনিয়া রাজবাড়ি ডিগ্রী কলেজে মানবিক বিভাগে
ভর্তি হয়। জন্ম সনদ অনুযায়ি মেয়ের জন্ম ২০০৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর। মেয়ে দক্ষিণ হাজীপুর
গ্রামের দীঘির পাড়ে শামীম আহমেদ এর বাড়ির পাশে আফসার মাষ্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতো। পড়তে যাওয়া ও আসার পথে মেয়ের সাথে শামীম আহমেদ মেয়েকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো। একপর্যায়ে গত ২ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রাইভেট পড়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। দুপুর দু’টার দিকে বাড়ি না ফেরায় মেয়ের খোঁজে নেমে পড়েন তিনি ও তার স্বজনরা। একপর্যায়ে মেয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সনকল জায়গায় তাকে খুঁজে না পেয়ে পরদিন তিনি শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (১৮২)করেন। ৭ এপ্রিল ফেইসবুকে তার মেয়ে ও প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ খুলনার এক নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে বসে ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ে সংক্রান্ত এক নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করছেন এমন ছবি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে জানান। একপর্যায়ে ওই রাতেই তিনি শামীম আহমেদ এর বিরুদ্ধে থানায় মেয়েকে অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি এজাহার দাখিল করেন।আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক পলাশ দেবনাথ, আশরাফ হোসেন ও লিটন সরদার জানান, এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রধান শিক্ষকের ভাই নুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বখতিয়ার আহমেদ। বড় ভাই সভাপতি হওয়ায় শামীম
আহম্মেদ কয়েক বছর ধরে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে জনসাধারণের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। একইভাবে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লে নূরনগর নবীন সংঘের মধ্যে তাকে আটকে রেখে গণধোলাই দেওয়া হয় । পরে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। হজ্ব করার পরও ওই প্রধান শিক্ষকের চরিত্র পরিবর্তণ না হওয়ায় তিনটি বিয়ে করার পরও সম্প্রতি তার বিদালয়ের এক সময়কার ছাত্রী হিন্দু নাবালিকাকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন। এ ধরণের শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনারত ছাত্রীরা লম্পট প্রধান শিক্ষকের কাছে নিরাপদ না হওয়ায় অনেকেই তাদের মেয়েকে
টিসি নিয়ে অন্যত্র ভর্তি করার কথা বলেছেন।
এদিকে নাবালিকা হিন্দু ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে শনিবার সকাল
১১টায় আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি বখতিয়ার
আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর, পরিচালনা
কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য আব্দুল কাদের, সদস্য শাকির আহম্মেদ, বিদ্যোৎসাহী সদস্য জিএম মঈনুদ্দিন লাভলু, অভিভাবক সদস্য
ডিএম রবিউল ইসলাম মুকুল, শিক্ষক সুশান্ত ঘোষসহ কয়েকজন অভিভাবক। সভায় একটি
কোএডুকেশন স্কুলে শামীম আহমেদ এর মত শিক্ষক থাকলে ছাত্রীদের পড়ানো নিরাপদ হবে না বলে অনেকেই মতামত পোষণ করেন। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তসহ তাকে কেন স্থানীয়ভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে ওই
শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশালতা মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠো ফোন ০১৭২০-৫৮৬৮৮০ সিমটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে শামীম
আহমেদ এর নাম উলে-খ করে শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা (১৬) দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দীপ্তেশ রায়কে আসামী গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।