‘শিশুবক্তার’ মোবাইলে পর্নো ভিডিও: বিয়েও করেছেন না জানিয়ে
নিউজ ডেস্ক:
গ্রেফতারের পর ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর ব্যবহৃত মোবাইলফোনে আপত্তিকর (পর্নো) ভিডিও পাওয়া গেছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের মতো তিনিও বিয়ে নিয়ে দিয়েছেন অস্পষ্ট তথ্য। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এক আত্মীয়কে তিনি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু গোপন ওই বিয়ে সম্পর্কে জানে না পরিবার ও এলাকাবাসী।
বুধবার (৭ এপ্রিল) ভোরে রফিকুল ইসলামকে আটক করে র্যাব। এরপর বিকেলেই গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
র্যাব বলছে, হেফাজতের সঙ্গে তার সখ্যতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কটূক্তির বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুনুল হকের মতো এ শিশুবক্তারও বৈবাহিক জীবন অস্পষ্ট। তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে নিজের ভাবির এক চাচাতো বোনকে (নাম আসমা বেগম) দুইপক্ষের পরিবারের অজান্তে বিয়ে করেছেন। সে বিয়ের কাবিন বা সাক্ষী সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি রফিকুল ইসলাম মাদানী।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদকালে তার মোবাইলফোনে বেশকিছু আপত্তিকর ভিডিও পেয়েছি। এছাড়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কুৎসা, কটূক্তিমূলক, বক্তব্য ভিডিও ও ফেসবুক কনটেন্ট পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে র্যাব সদরদফতরের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে র্যাব আইনগত পদক্ষেপ নেবে।’
রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোণা থেকে বুধবার সকালে আটক করে র্যাব।
এদিকে সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিচিত ও ভক্তরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোণার নিজ বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া রফিকুল ইসলামও সবশেষ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমাকে গুম করার চেষ্টা চলছে’।
এরপর দুপুরের দিকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী র্যাবের নিরাপত্তায় রয়েছেন মর্মে নিশ্চিত হয়েছি। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’
৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় রয়েল রিসোর্ট মাওলানা মামুনুল হকসহ এক নারীকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। এতে মামুনুলের ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর’ বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক লাইভে এসে রফিকুল ইসলাম মাদানী মামুনুল হকের সমর্থনে কথা বলেন।
এর আগে ২৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মোদিবিরোধী মিছিল থেকে এ ‘শিশুবক্তা’কে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের একটি মিছিল রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকা থেকে শুরু হয়। এতে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি মতিঝিলে যাওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় রফিকুল ইসলামকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছিল।
রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায়, থাকেন গাজীপুরে। তিনি নেত্রকোণার পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদরাসার পরিচালক। রফিকুল ইসলামের বয়স ২৬ বছর। অনেকেই তাকে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবেও চেনেন। তবে নিজের নামের সঙ্গে ‘শিশুবক্তা’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি জানান তিনি নিজেই। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজে তার নামের সঙ্গে ‘শিশুবক্তা’ ব্যবহার না করারও অনুরোধ জানান।
বিভিন্ন ওয়াজে নিজের বয়স সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘১৯৯৫ সালের শেষের দিকে আমার জন্ম। এখনও আমাকে শিশুবক্তা বানিয়ে রাখবেন কেন? আমি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাড়িতে পড়াশোনা করেছি। এরপর ক্লাস সিক্স পর্যন্ত স্কুলে পড়েছি। তারপর মাদরাসায় ভর্তি হই। নূরানিতে পড়েছি এক বছর। আল্লাহ রহমতে দুই বছরে হেফজ শেষ করেছি। এখানে তিন বছর, আগের ১২ বছর মোট হলো ১৫ বছর। এরপর আট বছর কিতাবখানায় পড়েছি।’