সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে চেয়ারম্যান ও ৬ গ্রাম পুলিশসহ ১২ জনের নামে মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের
নির্দেশে বাড়ির মধ্যে ঢুকে এক দম্পতিকে মারপিটের পর স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিলারের সঙ্গে স্বামীকে বেঁধে দ্বিতীয় দফায়
নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার কালিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের অঞ্জনা বিশ্বাস বাদি হয়ে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ছয় গ্রাম পুলিশসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
বিচারক মোঃ রেজোয়ানুজ্জামান ঘটনার তদন্ত করে আগামি ১০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরা সিআইডি’র পুলিশ সুপারকে নির্দেশ
দিয়েছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের অঞ্জনা বিশ্বাস জানান, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার পুলিশ।প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে
গত বছরের পহেলা জুন তার জমির উপর দিয়ে গায়ের জোরে বিনয় সরকার ও চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি সরকারের গৃহপরিচারিকার চলাচলের জন্য তার (অঞ্জনা) ছয় শতক জমির গাছ গাছালি কেটে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু
করেন। এ ঘটনায় তিনি কালিগঞ্জ সহকারি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তপতী গাইনের স্বামী তারক গাইনকে দিয়ে শ্বশুরসহ চারজনের নামে গত বছরের ৮ জুন থানায় মিথ্যা মামলা করান চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে তার দেওয়া এজাহারটি ওই বছরের ১৩ জুন থানায় রেকর্ড করা হয়। জমি জবরদখলের ঘটনায় তিনি কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে গত বছরের ১৯
অক্টোবর বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনকে বিবাদী করে নিষেধাজ্ঞা চান। শুনানী শেষে আদালত বিবাদীদের চলতি বছরের ২ মার্চের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিলে ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকারের নেতৃত্বে বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি সরকারের গৃহপরিচারিকা তপতী গাইনসহ কমপক্ষে ৫০ জন দা’ কুড়াল, কোদাল
ও শাবল নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে তাদের জমির দক্ষিণ পাশের পুকুর পাড়সহ আরো চার শতক জমি দখল করে মোট ১০ শতক জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন।
বিষয়টি তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোটসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন চেয়ারম্যান। এরই জের ধরে গত ২৪ মার্চ গ্রাম পুলিশ এন্তাজ আলী, আনোয়ার হোসেন, ভোলানাথ স্বর্ণকার, আব্দুস সাত্তার, শরিফুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী পল্লব তরফদার, দফাদার সাইফুল ইসলাম তাদের বাড়িতে আসেন। চেয়ারম্যানের কথামত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার কথা বললে নোটিশ ছাড়া যাবেন না বলায় ঘরের মধ্যে ঢুকে তাকে ও তার স্বামী মুকেশ বিশ্বাসকে মারতে মারতে ঘর থেকে বের করেন গ্রাম পুলিশসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে তার গায়ের ওড়না খুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে মারতে মারতে গোবিন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পিলারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে। এরপর মুকেশকে চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন দ্বিতীয় দফায় মারপিট করেন। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
তবে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার দাবি করেন, তিনি মারপিটের ঘটনা জানেন না। তার ও তার পরিষদের চেয়ারম্যানদের নামে মিথ্যা
মামলা দায়ের করা হয়েছে।সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আমজাদ হোসেন মামলার
(সিআর-১২৭/২১ কালি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।