আশাশুনির সদরে ভাঙ্গন রোধ না হওয়ায় নতুন ২ গ্রামসহ ৫ গ্রাম প্লাবিত
জি এম মুজিবুর রহমানঃ
নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ও ওভার ফ্লো হয়ে আশাশুনি উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢোকা ও সদর ইউনিয়নে রিং বাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানি ভেতরে প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরো ৩ গ্রামসহ মোট ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সদরে দয়ারঘাটে ৫টি পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়া রিং বাঁধের ৩টি
পয়েন্টে আটকানো সম্ভব হলেও এখনো দু’টি পয়েন্ট
দিয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে চলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু
কুমার সরকার ও এসও গোলাম বাপ্পী জানান, বিগত সুপার সাইক্লোন আম্ফানে আশাশুনিতে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৪০ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পেয়েছিল। মঙ্গলবার সেখানে আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাউবো’র বেড়ী বাঁধ উপচে ভিতরে পানি ঢুকেছিল।
বুধবার দুপুরের খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারে পানি মঙ্গলবারের তুলনায় আরো কমপক্ষে ১০-১২ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৫৪ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিং বাঁধ টিকতে পারেনি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আশাশুনি টু দয়ারঘাট মেইন সড়কে রিং বাঁধের পূর্বের ভাঙ্গনকৃত ৫ টি পয়েন্ট ছাড়া নতুন আরেকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন লাগলে জোয়ারের সময় লোনা পানি প্রবল বেগে ভেতরে প্রবেশ করছে। তবে ভাটার সময় পানি ভেতরে প্রবেশের তুলনায় কম নদীতে ফিরতে
পারায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ
হয়েছে মৎস্য চাষের প্রায় শতাধিক ঘের, অসংখ্য সাদা মাছ চাষের পুকুর, বসতবাড়ী, গবাদি পশুসহ আধা পাকা ও কাচা বোরো ধানের কৃষি জমি। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান সম সেলিম রেজা মিলন, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষনিকভাবে রিং বাঁধ
সংস্কারে লোক লাগিয়ে বাঁধ রক্ষার প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সদরের ৫টি পয়ন্টের ৩টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকী দু’টির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। চিংড়ি পোনা হ্যাচারি, একটি মসজিদ, ৪টি মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নতুন করে অসংখ্য বসতবাড়ী ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ডর্জনাধিক পরিবার পাউবো’র বাঁধে অবস্থান করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্লাবিত এলাকার বানভাসি পরিবারের
মধ্যে সরকারি ও এনজিও’র পক্ষ থেকে কোন শুকনা খবার সরবরাহ করা হয়নি। এখন এলাকায় সুপেয় পানি, মল ত্যাগের ব্যবস্থাসহ কোন খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে রিং বাঁধ যদি বাঁধা না হয় তাহলে উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাকী গ্রাম, শ্রীউলা ও শোভনালী
ইউনিয়নে পানি ঢুকে যাবে। পাউবো’র নির্বাহী
প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, সদরের মূল বেড়ী বাঁধে ভাঙ্গনের পর পাউবো’র পক্ষ হতে বাঁশ-বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার কাজ করা হয়। কাজের জন্য ১৪ মার্চ টেন্ডার আহবান করা হয়, ২২ মার্চ ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। ৫৩৪ মিটার কাজের জন্য ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঠিকাদার জিও বস্তা ও বালি নিয়ে এলাকায়
এসেছেন। হঠাৎ করে নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে রিং বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সামনের ভাটিকার গোণে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আমাদের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক ভাবে সেখানে থেকে শ্রমিক নিয়োজিত করে ৫টি পয়েন্টের ৩টির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকী দু’টির কাজ সম্পন্নের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে, মরিচ্চাপ নদীর পানি রক্ষা বাঁধ না থাকায় বর্তমান আশাশুনি বাজারের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন সড়কের উপর ও দেকান পাটের মধ্যদিয়ে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে সড়ক
প্লাবিত ও থানা পুকুর ডুবে গেছে। নদীর প্রবল জোয়ারে পানিতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিশখালী, কুড়িকাহুনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের নাসিমাবাদের ৫টি পয়েন্টে, খাজরার ৭ নং ওয়ার্ড ও গদাইপুর, আশাশুনি সদরের মানিকখালী গ্রামে রিং ও মুলবাঁধ ভেঙ্গে পানি ভেতরে ঢুকেছিল।
প্রতাপনগরের বাঁধের অবস্থা খুবই ভয়াবহ।
এখানে দ্রুততার সাথে কাজ করা না হলেও বাঁধটি পুনরায় ভেঙ্গে আবারও প্রতাপনগর ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানিকখালী ব্রীজ এলাকা হতে বামনডাঙ্গা গামী ওয়াপদা বাঁধের ও জামালনগর গামী বাঁধের অসংখ্যস্থানে ওভার
ফ্লো’র ঘটনা ঘটেছিল। এসব বাধসহ উপজেলার সকল এলাকায় বেড়ী বাঁধের উচ্চতা বাড়িয়ে মাটির সংস্কার কাজ করার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবী জানিয়েছেন।