কালিগঞ্জে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম
রঘুনাথ খাঁঃ
কলেজ পড়–য়া মেয়ের উত্যক্তকারিদের
বাড়িতে ডেকে এনে উস্কে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা ভূমিহীন নারী আছিয়া খাতুন এক সপ্তাহ ধরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্সে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। টাকার
অভাবে চিকিৎসকদের পরামর্শের পরও বিশেষ কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না ওই নারী।এদিকে হামলার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হামলাকারি এক ভূমি দস্যু তার স্ত্রীকে কাল্পনিক আহত দেখিয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি রেখে মিথ্যা মামলার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্সে চিকিৎসাধীন উপজেলার নরহরকাটি গ্রামের শাজাহান কারিকরের স্ত্রী আছিয়া খাতুন জানান, ৪৩ বছর ধরে ৪০টি ভূমিহীন পরিবারের ভোগদখলীয় সরকারি ৫০ বিঘা খাস জমি দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম কাল্পনিক কাগজপত্র তৈরি করে জবরদখলের চেষ্টা করে
আসছে। সহকারি জজ আদালত ও ভূমি আপিল বোর্ডে হেরে যেয়ে আনোয়ারুল ২০১৩ সালে হাইকোর্ট থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে বর্তমানে কয়েক
বিঘা দখলে রেখেছে। এরপরও সব জমি দখল করতে উপজেলা পরিষদের এক জনপ্রতিনিধির সহায়তায় পুলিশকে ম্যানেজ করে ভূমিহীনদের
নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছে।
সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে ভূমিহীন আবুল হোসেনের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আনোয়ারুল, তার সহযোগী আকবর হোসেনসহ কয়েকজন। এ ঘটনায় ১০ জানুয়ারি আবুল হোসেন মামলা করলে ৯ জানুয়ারি আনোয়ারুল তার পক্ষের লোক শফিকুলের ঘেরের বাসায় নিজেরা আগুন দিয়ে ভূমিহীনদের নামে
মিথ্যা মামলা করার চেষ্টা করে। আবুল হোসেনের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেওয়া ও মামলার সাক্ষী হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল আসামী আনোয়ার ও আকবরসহ তাদের
সহযোগীরা। আনোয়ার ও আকবর তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে কয়েকবার।
আছিয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে আঁখি মনি শিমু রেজা কলেজে পড়াশুনা করে। তাকে পথিমধ্যে উত্যক্ত করতো পিরোজপুরের সুজনসহ তিনজন। করোনার কারণে কলেজে না
যাওয়ায় ভূমিদস্যু আকবর উত্যক্তকারি তিনজনকে তাদের বাড়িতে এনে স্থান দিত। মেয়ে বাইরে বের হলেই তাকে উদ্দেশ্য করে আকবরের
বাড়ি থেকে বিভিন্ন ভাবে আশালীন মন্তব্য করা হতো। এতে ইন্ধন যোগাতো আকবরের স্ত্রী সুফিয়া ও তাদের দু’ মেয়ে। গত ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার মেয়ে আাঁখিমনি আকবরের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় উত্যক্তকারি সুজনসহ তিনজন আাঁখিকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়। এ সময়
আখিঁর সামনে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করে সুফিয়া। মেয়ে বাড়িতে এসে তাকে বিষয়টি বলা মাত্রই তিনি আকবরের বাড়িতে যেয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আকবর, তার স্ত্রী সুফিয়া, মেয়ে রুমা, তাছলিমা, আরিজুল , শাহীনুর ও মন্তেজসহ কয়েকজন তার উপর দা ও লোহার রড দিয়ে হামলা চালায়। তার বাম হাতে দায়ের কোপ ও ডান হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহার রড দিয়ে রক্তাক্ত
জখম করা হয়। আবুল হোসেনের মামলায় সাক্ষী দেওয়ার ফল কি হতে পারে তা তাকে পূণঃরায় হুশিয়ার করে দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয়
আাঁখিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার।
আছিয়া খাতুন বলেন, তারেক কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করার পর মামলা থেকে বাঁচতে ও ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আকবরের স্ত্রীকেও কাল্পনিক জখম দাবি করে একই হাসপাতালে ভর্তি
করা হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে তিনি ভর্তি হতে পারছেন না। তবে
স্থানীয়ভাবে মীমাংসার নাটক করে তাকেসহ তাদের ভূমিহীন নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ আছিয়ার।সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে নরহরকাটি গ্রামের ভূমিহীন জনপদে গেলে কেরামত আলী, শাহজাহান আলী, মফিজুল ইসলামসহ
কয়েকজন জানান, তাদের দখলীয় মাছের ঘের দখল করতে উপজেলা পরিষদের শীর্ষপর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধিকে দিয়ে উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীকে ম্যানেজ করে আনোয়ার হোসেন
তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে এলাকাছাড়া করে গত শনিবার গোলপাতা দিয়ে একটি ঘর বেঁধে
নতুন দখলের পায়তারা করছেন। ওইসব ঘরে দিনে ও রাতে বসানো
হচ্ছে মাদকের আসর। এসব নিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও জেলা
প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
তবে উপপরিদর্শক জিযারত আলী বলেন, তিনি দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ
এ থানায় রয়েছেন। তাকে ম্যানেজ করার কথা অস্বীকার করে বলেন,
ওসি সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ি তিনি যথাযথভাবে ঘটনার
তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার
হুসেন বলেন, উভয়পক্ষের দু’টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সত্যতা
যাঁচাই করে মামলা নেওয়া হবে।