হেসেখেলে টাইগারদের হারালো নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্কঃ

কিউইদের বিপক্ষে হার দিয়ে ওয়ানডে মিশন শুরু করেছে টাইগাররা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।

শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় ডানেডিনের ওভাল ইউনিভার্সিটি মাঠে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪১.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানে সব উইকেট হারিয়ে থামে টাইগারদের ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২১.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন হেনরি নিকলস ও উইল ইয়াং।

১৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামেন মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকলস। এ জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে পরাস্ত হন গাপটিল। ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে। ৩ চার ও ৪ ছক্কা মারা গাপটিল ২৭ বলে ৩৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান।  এরপর দেখেশুনে খেলতে থাকেন ডেভন কনওয়ে এবং হেনরি নিকোলস। এ দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের রানের লাগাম টেনে ধরেছিলেন দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মেহেদী হাসান।

কনওয়ে আর নিকোলসের ৬৫ রানের জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। কনওয়ে ফ্লিক করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের  হাতে ক্যাচ দেন। এরপর উইল ইয়ং আর হেনরি নিকোলস মিলে ইনিংসের ২২ তম ওভারেই দলকে জয় এনে দেন। দলীয় ১২৮ রানের সময় উইল ইয়াং বাউন্ডারি হাঁকালে জয়ে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।

এর আগে টসে হেরে ওপেনিংয়ে আসেন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ইনিংসের তৃতীয় বলে বোল্টকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা বানিয়ে রানের খাতা খুলেন তামিম ইকবাল। পরের ওভারে ম্যাট হেনরিকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে তামিমের রান দুই অঙ্কে উঠে। জন্মদিনে বড় কিছুর আভাস দিয়েছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে তৃতীয় ওভারে বোল্টের সোজা বল মিস করে এলবিডব্লিউ এর শিকার হন তামিম। ১৫ বলে ১৩ রান করে তামিম ফেরেন সাজঘরে।

মাঠে আসেন সৌম্য সরকার। বোল্টের শর্ট বলে পয়েন্টের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন। কভারে দাঁড়ানো অভিষিক্ত কনওয়ের জন্য স্রেফ ক্যাচ প্র্যাকটিস। ৩ বল খেলে কোনো রান না করেই সৌম্য ফেরেন সাজঘরে। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় শূন্যের স্বাদ পেলেন সৌম্য।

প্রথম দুই ওভারে একটি ছক্কা, একটি চার। পরের ৮ ওভারে বাংলাদেশ কোনো বাউন্ডারি পায়নি। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে রান ছিল মাত্র ৩৩। এরই মধ্যে হারান তামিম ও সৌম্যর উইকেট। পঞ্চম ওভারে বোল্টের জোড়া আঘাতে দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর মন্থর গতিতে এগোয় বাংলাদেশের রান।

তামিম ও সৌম্য ফেরার পর রানের চাকা সচল রেখেছিলেন লিটন। উইকেটে থিতু হয়েছিলেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু বাজে এক শটে ইনিংসের সমাপ্তি টানলেন তিনি। পেসার জিমি নিশামের শর্ট বল মিড অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্টের হাতে সহজ ক্যাচ দেন। ৩৬ বলে ১৯ রানে শেষ তার ইনিংস। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৪২।

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন মুশফিকুর রহিমও। জিমি নিশামের অফস্ট্যাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করে ডিপ পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে থাকা মার্টিন গাপটিল বল্টি লুফে নেন। ৪৯ বলে ২৩ রান করে মুশফিক ফেরেন সাজঘরে। তার আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৬৯।

নিশামের ফুলার লেন্থ বল ড্রাইভ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বল হাতের নাগালে থাকায় ক্যাচ ধরার চেষ্টায় ছিলেন নিশাম। কিন্তু তার আঙুলে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে। নিশাম ক্যাচ ধরতে পারেননি ঠিকই কিন্তু অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান রান আউট। তার হাত ছুঁয়ে যাওয়া বল স্টাম্পে আঘাত করার সময় ক্রিজের বাইরে ছিলেন মিথুন। ২৭ বলে ৯ রানে শেষ মিথুনের ইনিংস। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৭২।

উইকেট থেকে সরে গিয়ে বাঁহাতি অফস্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বল খেলতে গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল মিস করে বোল্ড মিরাজ। স্যান্টনার পান প্রথম সাফল্য। ১০ বল খেলে মিরাজ পান ১ রান। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৬ উইকেটে ৭৮।

স্যান্টনারকে ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন অভিষিক্ত মাহেদী হাসান। দুই বছর পর আবার বাঁহাতি স্পিনারকে উড়ানোর চেষ্টা করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এবার আর পারেননি। স্যান্টনার বল খানিকটা টেনে দেয়ায় টাইমিংয়ে গড়বড় করেন মাহেদী। মিড অন থেকে পেছনে গিয়ে দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন নিকোলস। ২০ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার আউটের সময় বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৯৮।

৪০ ওভারে বাংলাদেশের রান মাত্র ১২৫। শেষ ১০ ওভারে ঝড়ো ব্যাটিং না করলে স্কোরবোর্ডে লড়াকু পুঁজি আসবে না। মাহমুদউল্লাহ ৪১তম ওভারের প্রথম থেকেই চেষ্টা চালালেন। তাতে বিপদও ডাকলেন। ম্যাট হেনরির শর্ট বল পুল করে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৫৪ বলে ২৭ রানে শেষ হয় তার লড়াই। তার ফেরার সময় বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ১২৫।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ট্রেন্ট বোল্ট জোড়া ধাক্কায় ফিরিয়েছিলেন তামিম ও সৌম্যকে। ৪২তম ওভারে আবারো তার জোড়া আঘাত। এবার তার শিকার হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের লেজের দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ১৩১ রানে অল আউট করলেন দ্রুতগতির এ পেসার। হাসান মাহমুদ ১ রানে তার স্লোয়ার বলে বোল্ড হন। তাসকিন ১০ রানে ক্যাচ দেন মিড অফে। এতে থামে টাইগারদের ইনিংস।  মুস্তাফিজুর রহমান ১ রানে ছিলেন অপরাজিত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৩১/১০, ৪১.৫ ওভার
রিয়াদ ২৭, মুশফিক ২৩, লিটন ১৯
বোল্ট ৪/২৭, সান্টনার ২/২৩, নিশাম ২/২৭

নিউজিল্যান্ড: ১৩২/২, ২১.২ ওভার
নিকোলস ৪৯*, গাপটিল ৩৮, কনওয়ে ২৭
তাসকিন ১/২৩, হাসান ১/৪৯

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)