ফেসবুকে ‘গুজব সাপে’ ভরেছে দেবহাটার খই গাছ!
দেবহাটা প্রতিনিধি:
‘দেবহাটার পারুলিয়াতে একটি খই গাছের পাতায় পাতায় সাপ। একটি নয়, দুটি নয় শত শত সাপ’ এমন গুজবে গেল দুদিন ছেয়ে ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই ভুইফোড় অনলাইনের পাশাপাশি দেশের অনেক নামিদামী গণমাধ্যমের অনলাইন নিউজেও ছাঁপা হয়েছিল রসালো এ খবরটি। অথচ আশ্চার্যের বিষয় হলো এসকল সংবাদে শত শত সাপ থাকার সুনির্দিষ্ট কোন ছবি বা ভিডিও সংযুক্ত না করেই অকারনে গুজবটি একের পর এক মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল। সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি জেলার বাইরে থেকেও রাতে দিনে ‘গুজব সাপ’ এ ভরপুর ওই খই গাছটি দেখতে ভিড় জমিয়েছিলো শত শত মানুষ। তবে প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে নিরাস হয়ে ফিরে গেছেন। চাঞ্চল্যকর এ গুজবটি দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নে গড়িয়াডাঙ্গা গ্রামের জনৈক নুর ইসলামের বাড়ির একটি খই গাছকে কেন্দ্র করে ছড়ানো হয়। গুজব সাপে ভরপুর নিউজটিতে আরো উল্লেখ ছিল যে, সাপগুলো নাকি দিনের বেলাতে দেখা যায়না এবং রাত যতো বাড়তে থাকে ততোই নাকি গাছের পাতায় পাতায় সাপের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সেখানে আরো বলা হয়েছিল যে, ওই বাড়ির মালিক গাছটি কাটার চেষ্টা করলে তার প্রায় লাখ টাকা মুল্যের একটি গরু মারা যায় এবং পাশ্ববর্তী এক যুবক একটি সাপকে আঘাত করায় পরবর্তীতে তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন। মুলত বিভিন্ন বেনামী মিডিয়ায় একটি রসালো খবর তৈরীর জন্য কাল্পনিক ভাবে খবরটিকে গুজব সাপে ভরিয়ে তোলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসংক্রান্ত গুজবের ছড়াছড়ি হতে থাকলে শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে ফেইসবুক লাইভে মিথ্যা গুজবটির এপিট-ওপিট জনসম্মুখে তুলে ধরেন দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওন। এমনকি গেছো প্রজাতির মাত্র দুটি সাপের উপস্থিতিও লাইভে তুলে ধরে মানুষকে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। শনিবার সকালে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদল ও প্রেসক্লাবের সংবাদকর্মীরা ওই ঘটনাস্থলে যান। সেসময়ে খই গাছের পাশ্বস্ত একটি খেজুর গাছের পাতায় মাঝারি আকারের গেছো প্রজাতির দুটি সাপ দেখতে পান সংশ্লিষ্ট অফিসাররা। এছাড়া যে খই গাছটি নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তাতে কোন সাপের উপস্থিতি খুজে পাননি তারা। এসময় ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত অফিসার ও পুলিশ সদস্যরা খেজুর গাছ থেকে সাপ দুটি সরাতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও বাড়ির মালিক নুর ইসলাম দ্বিমত পোষন করায় সাপ দুটি তাড়ানো বন্ধ রাখা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত আবুল হাশেম ও রবিউল ইসলাম বলেন, খই গাছের পাশে থাকা খেজুর গাছটিতে স্থানীয় গেছো প্রজাতির দুটি সাপ রয়েছে। সাপ দুটি বিষধর প্রজাতির নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, গেছো প্রজাতির দুটি সাপ একটি খেজুর গাছে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্ভবত সাপ দুটি প্রজনন কিংবা শরীরের উপরিভাগের চামড়া বদলানোর জন্য গাছটিতে আশ্রয় নিয়েছিলো। এঘটনাকে রঙচঙ মাখিয়ে গুজবের রুপ দেয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, গাছে শত শত সাপ থাকার খবরটি নিছক গুজব। তবে গুজবটি পরিকল্পিত কিনা এবং কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবটি ছড়িয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তিনি গুজবে কান না দেয়ার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার বলেন, ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ও পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে গাছে শত শত সাপ থাকার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এঘটনাকে গুজব বলেও অবিহিত করেন তিনি।