সাতক্ষীরার তালায় ভোটকেন্দ্রের জায়গা স্বল্পতা-পরিবর্তন চায় গ্রামবাসী
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার তালা সদর ইউনিয়নের বারুইহাটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণস্বাক্ষরিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। ওয়ার্ডের সাত শতাধিক গ্রামবাসী এ আবেদন করেন।
আবেদনে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন, তালা সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডটি বারুইহাটি ও মহল্লাপাড়া গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত। স্বাধীনতার পর থেকে ওয়ার্ডে ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত তালা আলীয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এক দশক আগে ভোটকেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বারুইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ যথারীতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে তালা আলীয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। বারুইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে একদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জায়গা স্বল্পতা অন্যদিকে বিদ্যালয়টি মাত্র তিন কক্ষ বিশিষ্ট। এছাড়া ভোটকেন্দ্রটি তালা সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে। তার ভাই তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান। বারুইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রটি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রভাব বিস্তার করে কেন্দ্রটিতে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে জনস্বার্থে ভোট কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে তালা আলীয় মাদরাসা পূর্বের ভোট কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাচন কশিমন গত ৭ মার্চ ২০২১ তারিখে ১৭২ নং স্মারকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রেরণের নীতিমালা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম।
নীতিমালায় তিন নং এর (১) এর (ক) তে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্তস্থানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। জনগণের জন্য উন্মুক্ত নহে এরুপস্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। কোন প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রাধীন কোন স্থানে কোন অবস্থাতেই কোন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। (খ) সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচন এবং বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যতদূর সম্ভব সে সমস্ত প্রতিষ্ঠাণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে বহাল থাকবে। তবে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গত ইউনিয়ন পরিষদ ও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র ব্যতিত প্রয়োজনে নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনে গত ই্উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র যৌক্তিক কারণে পরিবর্তন করা যাবে। (গ) গড়ে দুই হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কোন কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা দুই হাজারের অধিক হলে অতিরিক্ত ভোটারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত ভোট কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে। (ঘ) বিশেষ ক্ষেত্রে কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে দুই হাজার ভোটারের কম সংখ্যক ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবীর বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, কেন্দ্রটিতে জায়গা স্বল্পতা রয়েছে। ভোট কেন্দ্রটি পরিবর্তন করা হবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি সঠিক কোন তথ্য দেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন ও তার ভাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান প্রভাব বিস্তারসহ বারুইহাটি গ্রামের নিয়ামত আলী মোড়ল, কামরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে মারপিট করে। সুষ্ঠভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা। ইতিপূর্বে সরদার জাকির হোসেন তালা থানার এসআই মনির হোসেনকে মারপিট করেন, তার অপর ভাই সরদার গোলদার তালা থানার মহিলা পুলিশ কন্সটেবলকে মারপিট করেন। তাছাড়া তার অপর ভাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান সাম্প্রতি তালার নিকারীপাড়ার লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার প্রধান আসামী। এ কারণে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক পদ থেকে ২০২০ সালের ১৯ আগষ্ট বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কারপত্রে উল্লেখ করা হয়, সরদার মশিয়ার রহমান সংগঠণের পদ পদবী ব্যবহার করে উপজেলাব্যাপী নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠণ সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন। তালার কৃষি শ্রমিক লুৎফর নিকারীকে হত্যায় জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। সংগঠণের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।
১১.০৩.২১