কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সাড়ে ছয় হাজার বিদেশি শ্রমিকের মৃত্যু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দশ বছর আগে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে কাতার। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে গত এক দশকে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এ শ্রমিকদের সবাই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে কাতারে কাজ করতে গিয়েছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে গড়ে দক্ষিণ এশিয়ার ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে।
এছাড়া পেট্রো ডলারের ঝনঝনানি দেখিয়ে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব দখল করেছে বলেও অভিযোগ আছে দেশটির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলংকা সরকারের সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে গার্ডিয়ান দাবি করেছে, ২০১০-২০২০ পর্যন্ত এই চার দেশের ৫ হাজার ৯২৭ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এর মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নেপালের এক হাজার ৬৪১ জন এবং বাংলাদেশের এক হাজার ১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
শ্রীলংকার ৫৫৭ জন শ্রমিকের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছে সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান। পাকিস্তান সরকারের থেকে তারা সরাসরি তথ্য পায়নি। তবে কাতারে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে পাকিস্তানের শ্রমিক মারা গেছে অন্তত ৮২৪ জন।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শ্রমিকদের এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রকৃত পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতির জন্য ফিলিপাইন এবং কেনিয়ার অনেক শ্রমিক নিযুক্ত আছেন। কিন্তু তাদের তথ্য ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। এমনকি এই পরিসংখ্যানে ২০২০ সালে মৃত শ্রমিকদের সংখ্যাও অন্তভূক্ত করা হয়নি।
কাতার তাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। বিমানবন্দন, রাস্তা-ঘাট, হোটেলসহ কাজ চলছে দশটির বেশি বড় প্রজেক্টের। এগুলোতে কাজ করতে গিয়েই মারা গেছেন শ্রমিকরা। তবে কে, কোথায় কাজ করতে গিয়ে কিভাবে মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এমনকি অনেকের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে করতে দেওয়া হয়নি তাদের ময়নাতদন্তও।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে ৮০ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে কাতারের পক্ষ থেক দাবি করা হয়েছে। নেপালের মৃত শ্রমিকদের মধ্যে ৪৮ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে বলা হয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে হঠাৎ হৃদরোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়া ভারত ও নেপালের যথাক্রমে ১০ ও ১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা, ৬ ও ১০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টসের পরিচালক নিক ম্যাকগিহান জানান, ২০১১ সাল থেকে কাতারে মারা যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশই দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর সেখানে গেছেন। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গাফল রিসার্চার মে রামানস জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোন কিছুই সেভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। এছাড়া কাতার সরকারের প্রতি নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মান বাড়ানোর আহ্বানও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচের গালফ রিসার্চার হিবা জায়াদিন বলেন, ‘সকল অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য যেন তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয় এ বিষয়ে কাতার সরকারকে আইন সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। অনাকাঙ্খিতভাবে মৃতদের সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ থাকার বিষয়েও বলা হয়েছে।’
কাতারের বিশ্বকাপ প্রজেক্ট নিয়ে ফিফার গর্ভনিং কাউন্সিলের মুখপাত্র এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ফিফা সবসময় তাদের প্রজেক্টে কাজ করা শ্রমিকদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া বড় প্রজেক্টের নিমার্ণকাজের সঙ্গে তুলনা করলে কাতারে ফিফার এই প্রজেক্টে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। তবে তারা তাদের বক্তব্যের কোন প্রমাণ হাজির করেনি।