শ্যামনগরে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি চাষে পানি সংকটে ঘের পরিচর্যায় বাধাগ্রস্ত চাষীরা

শ্যামনগর প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি চাষে পানি সংকটে চিংড়ি ঘের পরিচর্যায়  বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চাষীরা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৫৪ হাজার  ৫০০টির বেশি  ঘের রয়েছে। সাতক্ষীরায় এ বছর ৬৬ হাজার এর বেশি হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮০০ মেট্রিন টন। বাগদা চিংড়ি সাধারণত আট থেকে ১৪ পিপিটি লবণাক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।  সূর্যতাপের কারণে পানিতে লবণাক্ততার পরিমান অনেক বেশি হয়। গতবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও এবার লক্ষ্য্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানে এক বিঘা থেকে, হাজার বিঘা জমিতে সনাতন পদ্ধতির মাছের ঘের আছে। অধিকাংশ ঘেরে পানির গভীরতা দেড় থেকে দুই ফুটের বেশি নয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চিংড়ি চিংড়ি চাষী আব্দুল হামিদ জানান, জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া, রায়মঙ্গল, কপোতাক্ষ ও কালিন্দি নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য এক বিঘা জমি লিজ নিতে হয় প্রতি বছরের জন্য ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। মৌসুম শুরুতইে সুন্দরবনের উৎপাদিত রেণু এবংচট্টগ্রাম, কলাতলী ও কক্সবাজারের এলাকার বিভিন্ন হ্যাচারির সরবরাহকৃত রেণু ঘেরে ছাড়া হয়।
তবে অনেকেই দ্বিতীয় গ্রেডের হ্যাচারির রেণু পোনা ব্যবহার করে থাকে। তবে ঘেরে রেণুপোনা ছাড়ার আগে যথাযথভাবে তার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয় না।লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ির চাষও হয়ে থাকে।

তারা আরো জানান, জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রেণু ছাড়ার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঘের থেকে বাগদা চিংড়ি ধরা শুরু করা হয়। মাছচাষি ফজলুল হক জানান, ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই  তীব্র তাপদাহে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া চিংড়ি মারা যাওয়ার কারণ বলে তারা মনে করেন।
মাছ মারার হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রতি গণে গণে ঘেরে পানি উঠাতে হয় যাতে মাছের ও পানির পরিবেশ ভালো থাকবে

এমতাবস্থায় ভয়ে ছোট অব্স্থায় চিংড়ি ধরতে বাধ্য হতে হয় চাষিদের। ফলে বিদেশে পাঠানোর জন্য মাছের সেটে ওইসব চিংড়ি বিক্রি না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে  ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

কৃষি ব্যাংক সহ বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থা কাছথেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে মাছের চাস পরিচালনা করতে হয়। তাছাড়া ছোট ছোটদের ব্যবসায়ীরা

মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করতে আসা ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়ে মাথায় হাত উঠছে।
আধুনিক পদ্ধতিতে সরকারিভাবে চিংড়ি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আবারো সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা।

আলহাজ্ব আজিজার রহমান মোড়ল বলেন বিভিন্ন সময় পানি উত্তোলনের বাধাগ্রস্ত হওয়ায়, মাছ উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। যার ফলে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায়  লিজ নেওয়া জমির মালিকদের হারির টাকা দিতে ও কর্মচারিদের বেতন দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

পানির গভীরতা কম থাকায় তীব্র তাপদাহে মাছ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া হ্যাচারিতে ১০ পিপিটি লবণাক্ততার পানিতে রেণু উৎপাদনের পর তা পরিশোধিত না করে যেকোন পিপিটিযুক্ত পানিতে রেণু ছাড়ার ফলে এক মাস না যেতেই নতুন পানির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে।  জানা গেছে
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে উপ-সহকারী
প্রকৌশলী তন্ময় হালদার

বাঁশঝাড়িয়া পওর শাখা, বাপাউবো, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা কৈখালী ইউনিয়ানের নৈকাটি, আন্তখালী, মাঝের আটি, নিদয়া কাঠামারী, পরানপুর, শৈলখালী গ্রামের এবং নুরনগর ইউনিয়ন এর কুলতলী রামচন্দ্রপুর গ্রামের  ৫৩ জন ৫ নম্বর পোল্ডারের বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কেটে বাঁদের নিচদিয়ে অবৈধভাবে পাইপ বক্যকল স্থাপন করে বাঁধের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে বলে জানান।

চাষিরা জানান, দীর্ঘ ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর যাবত আমরা এভাবেই চিংড়ি মাছের ঘের চালিয়ে আসছি। আরো জানান, আমাদের কোটি, কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কয়েক শত ঘেরে পানি পানি উত্তোলন ও প্রসেসিং শেষে চিংড়ি মাছ  ছাড়ার পরে আমাদেরকে তাৎক্ষণিক কিভাবে নোটিশ করে বেকায়দায় ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমাদের কয়েক হাজার বিঘা জমির এই ঘেরে যদি পানি উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবে ঘের মালিকরা। কর্মসংস্থান হারাবে কয়েক হাজার মানুষ। দিশেহারা হয়ে পড়বে অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলো, যারা দিন আনা দিন খাওয়া ঘরের উপরে নির্ভরশীল দিন মজুরি দিয়ে থাকেন, তারা যেমন হারাবে কাজ তেমনি সন্তানরা বঞ্চিত হবে তাদের এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘের মালিকরা প্রশাসনসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কোটি, কোটি টাকা খরচ করে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হতে হয় সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)