শ্যামনগরের কৈখালীতে বাঘে ধরার ঘটনায় রতন, মিজান অপহরনে বিচারের দাবীতে মানববন্ধন
শ্যমনগর প্রতিনিধিঃ
গত ১৯ জানুয়ারী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাধীন কৈখালী গ্রামের রতন, মিজান ও মুছা নামের তিন যুবক চোরাকারবারীদের কবলে পড়ে নিখোজ হয়। মুছা ফেরত আসলেও নিখোঁজ থাকে রতন ও মিজান। এ ঘটনায় রতনের স্ত্রী তাছলিমা বেগম বাদী হয়ে গত ২৫ জানুয়ারী শ্যামনগর থানায় এজহার জমা দিলেও মামলা না হওয়ায় ৩০ শে জানুয়ারি শনিবার বিকালে এলাকার মানুষ ন্যায় বিচারের দাবীতে ভেটখালী – কৈখালী ব্রিজের উপর এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে সাংবাদিক ও সমাজ সেবক মোঃ হুমায়ুন কবির, রতনের বাবা কফিলউদ্দিন ( বাঙ্গাল ) রতনের মা ও তার স্ত্রীসহ এলাকাবাসী বক্তব্য রাখেন। এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত জনতা ন্যায় বিচারের দাবী জানান।
মানববন্ধন থেকে জানা যায়, রতন , মিজান অপহরন হওয়ার মূল নায়ক মামুন কয়াল কৈখালী ইউনিয়নের সাহেবখালী গ্রামের মোঃ জাহার আলী কয়ালের পুত্র ।
তাছাড়া একই এলাকার রুহুল আমিন গাজীর পুত্র মোঃ আজিজুল গাজী , নওশাদ কয়ালের পুত্র মোঃ রফিকুল কয়াল , জয়াখালী গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের পুত্র মোঃ আবু মুসা , পশ্চিম কৈখালী গ্রামের মৃত মতিয়ার গাজীর পুত্র সোহরাব গাজীসহ বেশ কয়েকজন সীমান্তবর্তী এলাকায় দাপটের সাথে চোরাকারবারী করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযানে ১/২ জন গ্রেফতার হলেও অর্থের দাপটে আর আইনের ফাঁক ফোকড়ে তারা জামিনে বাইরে আসে। বর্তমানে কৈখালী সীমান্তের নদী ও সুন্দরবন চোরাকারবারী সেন্ডিগেটের নিরাপদ রুট। এই চক্রের পিছনে অত্র ইউনিয়নের বড় একজন নেতার হাত আছে। তার ছত্র ছায়ায় ও মদদে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বুক খুলে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কৈখালী সীমান্তে বেশ কয়েকটি বি,জি,বি ক্যাম্প , অপর দিকে এলাকায় ফরেষ্ট , কোষ্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ অফিস থাকা শর্তেও নদী পথ ও সুন্দবরবন ব্যবহার করে কি ভাবে তারা ভারত থেকে মাদক , গরু , অস্ত্র সরবারহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরন করে ।
এই চক্রের কবলে পড়ে একই এলাকার কফিলুদ্দীনের পুত্র রতন শেখ ও মনো মিস্ত্রীর পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান নিখোঁজ বেশ কয়েকদিন। পরিবারের দাবি অনুযায়ী এ চক্রটি অর্থের লোভ ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে রতন ও মিজানকে ভারত থেকে অবৈধ্য মালামাল আনতে পাঠায়। পরবর্তীতে তাদের খোঁজ না পাওয়ায় মুসার মাধ্যমে বাঘের আক্রমনে নিহতের নাটক সাজাচ্ছে বলে ধারনা অনেকের। মুসার বক্তব্য অনুযায়ী বোঝা যায় , তার ভাষ্যটি সম্পূর্ন্ন সাজানো । চোরাই সেন্ডিগেটের সাজানো গল্প সে ব্যক্ত করছে। মুসাকে আইনের আওতায় আনলে সঠিক তথ্য উৎঘাটন হবে বলে ধারনা করছে এলাকাবাসী। অপর দিকে নিখোঁজ রতন শেখের স্ত্রী মোছাঃ তাসলিমা বেগম ২৫ শে জানুয়ারী শ্যামনগর থানায় মোঃ মামুন কয়াল , মোঃ আজিজুল গাজী , মোঃ রফিকুল কয়াল , সোহরাব গাজী , মোঃ আবু মুসা , মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে এজহার দায়ের করেছেন। লিখিত এজহারে তাসলিমা বলেন , গত ১৯ শে জানুয়ারী রাত ৮ .০০ টার দিকে মামুন ০১৯৫০-২৪৬৫৩০ মোবাইল নং থেকে রতনের ব্যবহৃত ০১৪০৬-৩৫৭০৯৪ মোবাইল নং এ ফোন করে তাকে ডাকে। রতন না গেলে আসামীগণ একত্রিত ভাবে তার বাড়ীতে আসে এবং রতনকে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে মালামাল আনার কথা বলে। কিন্তু রতন তাতে রাজি না হলে আসামীগণ তাকে হত্যার হুককি দেয়। রতন নিরুপাই হয়ে তাদের সাথে বাড়ী থেকে বাহির হয়ে ২/৩ দিন বাড়ী না ফিরলে তাসলিমা তার স্বামীর সন্ধান চাইলে আসামীগণ তালবাহানা শুরু করে এবং বিষয়টি নিয়ে কোন ঝামেলা বা আইনের আশ্রয় নিলে হত্যা করার হুককি দেয়। তবুও থেকে থাকেনি স্বামীহারা তিন সন্তানের জননী মোছাঃ তাসলিমা বেগম। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় , এ চক্রটি এলাকার সহজ , সরল ব্যক্তিদের বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও অর্থের লোভ দেখিয়ে কৈখালী সীমন্তের নদী ও সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে ভারতে পাঠায়।
ভারতে থাকা চক্রের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে গরুর ব্যবসার আড়ালে মাদক ও অস্ত্র নিয়ে একই পথে দেশে ফেরে । শ্যামনগর উপজেলায় বর্তমানে মাদক সেবনকারীদের উৎপাত বেড়ে চলেছে। পাড়া মহল্লায় মাদক সেবনকারীদের উপদ্রব চোখে দেখার মত। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যখন মাদক মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় জ্ঞাপন করেছে । ঠিক তখনি দাপটিয়ে বেড়াচ্ছে কৈখালীর এই চোরাই সেন্ডিগেট। মানববন্ধন থেকে নিখোঁজ রতনের পরিবার মামুনসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
Please follow and like us: