সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ৩০ বছরের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি জবর দখল ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
আসাদুজ্জামানঃ
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে দীর্ঘ ৩০ বছরের ভোগদখলীয় সম্পত্তি প্রতিপক্ষ কর্তৃক জালিয়াতির মাধ্যমে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাতের আধারে
জবর দখল ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একই সাথে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভাড়াশিমলা গ্রামের
মৃত. শেখ মতলেব আলীর ছেলে জমির মালিক শেখ রমজান আলীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে এসব অভিযোগ করেন।
রমজান আলী জানান, কালিগঞ্জ উপজেলার কামদেবপুর মৌজায় জে এল-৩৪, মূল এস এ
রেকর্ডীয় মূল মালিকের ওয়ারেশদের কাছ থেকে এস এ ৩৪৫ খতিয়ানে ১০ কোবলা দলিল মূলে ৬.৭ একর জমি ৩৪৬ খতিয়ানে ৫ দলিল মূলে ১.১০ একরসহ মোট ৯.৭২ একর জমির মধ্যে ৪০ শতক বিক্রি করায় বর্তমানে ৯.৩২ একর সম্পত্তির মালিক তিনি।
উক্ত জমি তার নামে রেকর্ড ও খাজনা দাখিলাসহ বৈধ সব কাগজপত্র রয়েছে। ওই জমি মাছের ঘের করার জন্য তিনি একই এলাকার মৃত. নকুল চন্দ্রের ছেলে লক্ষীকান্তকে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইজারা প্রদান করেন। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে ভাড়াশিমলা এলাকার মৃত শেখ আব্দুল করিমের ছেলে চিহ্নিত ভ‚মিদস্যু ও প্রতারক শেখ মঞ্জুরুল
ইসলাম বিভিন্নভাবে ওই সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চক্রান্ত শুরু করে।
এনিয়ে শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম দিং সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। পরে তা খারিজ হয়ে যায়। এছাড়া তার দায়ের করা মামলায় মঞ্জুরুলের
বিরুদ্ধে বারিতাদেশ দেয় আদালত। এরপর মুঞ্জুরুল এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে
সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
শেখ রমজান আলী আরো জানান, কোনভাবে সম্পত্তিতে যেতে না পেরে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে মঞ্জুরুলের নেতৃত্বে তার ছেলে ওয়াসিম পাপ্পু ও জাকির হোসেনসহ ভাড়াটিয়া ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমার কাছ থেকে ইজারা নেওয়া লক্ষীকান্তের মাছের ঘেরের বাসায় আগুন লাগিয়ে দেয় এবং লোকজন দিয়ে ঘেরের মাছ ধরতে থাকে। এসময় লক্ষীকান্ত বাধা দিতে গেল তাকে খুন জখমসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে। তারা লক্ষীকান্তের ক্যাশ বাক্স ভেঙ্গে ৮৪ হাজার
৫শ’ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়াসহ প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে।
এঘটনায় লক্ষীকান্ত বাদী হয়ে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অবৈধভাবে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে মুঞ্জুরুল সংখ্যালঘুর উপরও নির্যাতন ও অত্যাচার করে যাচ্ছে। তিনি এ সময় ভূমিদস্যু মঞ্জুরুলের কবল থেকে সম্পত্তি উদ্ধার এবং অগ্নিসংযোগ ও মিথ্যে মামলার হয়রানির প্রতিকার পেতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইজারা গ্রহনকারী লক্ষীকান্ত জানান, দীর্ঘ ১২/১৪ বছর যাবত তিনি ওই জমি রমজান আলীর কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শান্তি পূর্ণভাবে মৎস্য ঘের করে আসছিলেন। হঠাৎ করেই গত গত ১৩ জানুয়ারি রাতে মঞ্জুরুলের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী
আমার ঘের জবর দখল করে ঘেরের বাসায় আগুন লাগিয়ে দেয় এবং লোকজন দিয়ে ঘেরের
মাছ ধরতে থাকে। শুধু তাই নয় সে আমার পরিবারে সকলের নামে মিথ্যামামলা দায়ের করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি সংখ্যালঘুর হওয়ায় আমার উপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তিনি এ সময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোরদাবী জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দীন জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত ওই জমি রমজান আলী ভোগ দখল করে আসছেন। তার নামে রেকর্ড ও খাজনা দাখিলাসহ বৈধ সব কাগজপত্রও রয়েছে। অথচ হঠাৎ করেই অবৈধভাবে মঞ্জুর ওই জমি জবর দখল করেছেন।
একই এলাকার মৃত অনিল দাশের ছেলে জয়দেব দাশ জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি দেখে আসছেন এই জমি রমজান আলীর কাছ থেকে ইজারা নিয়ে লক্ষিকান্ত ঘের করে আসছেন। অথচ হঠাৎ করেই অবৈধভাবে এই ঘেরের বাসায় আগুন ধরিয়ে তা জবর দখল করা হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, এ ঘটনায়
উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুটি তদন্তাধীন রয়েছে।
তিনি আরো জানান, নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।