দেবহাটার পারুলিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী মাঠে

দেবহাটা প্রতিনিধি :

জমে উঠেছে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সাধারণ মানুষ আর ভোটারদের মন জয় করতে বর্তমানে নির্বাচনী এলাকার মাঠ ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান পদে ইতোমধ্যেই প্রার্থীতা ঘোষনা দেয়া ৫ প্রার্থী।

দেবহাটার পাঁচটি ইউনিয়নের পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ২ হাজার ৬৬৮ জন। তারমধ্যে ১৭ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পারুলিয়া ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। এখানে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৪৪ জন। মুলত আগামী ইউপি নির্বাচনে এসকল ভোটাররাই ব্যালটের মাধ্যমে পারুলিয়া ইউনিয়নের অবিভাবক নির্ধারণ করবেন।

২০১৬ সালের ২২ মার্চ পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও, খেজুর বাড়িয়ার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহন স্থগিত করা হয়। পরে ৩০ অক্টোবর স্থগিত ভোট কেন্দ্রটিতে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপির প্রার্থী গোলাম ফারুক বাবুকে মাত্র ৪৬ ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি পারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচন পরবর্তী টানা প্রায় পাঁচ বছর ধরে পারুলিয়ার সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে এলাকার উন্নয়ন করে চলেছেন সাইফুল ইসলাম। একজন সৎ, সাদামাটা ও নিরহংকারী ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবেও উপজেলা জুড়ে খ্যাতি রয়েছে তার। এবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী তিনি।
সাইফুল ইসলামের পাশাপাশি বর্তমানে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সাবেক ইউপি সদস্য ও পারুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্নুর। দীর্ঘদিন যুবলীগের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়নের সকল শ্রেনি পেশার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকায় ইউনিয়ন জুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে মিন্নুরের। তারা দুই ভাই-ই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-০৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপিসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বেশ আস্থাভাজন। ফলে ইউনিয়নের ভাটারসহ সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান মিন্নুর।
তাছাড়াও চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আরোও মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনি, বিগত ইউপি নির্বাচনে স্বল্প ভোটে পরাজিত হওয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদের ভাতিজা সাবেক যুবলীগ ও ওলামালীগ নেতা শফিকুর রহমান সেঝ খোকন। অন্যদিকে পারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দীন বিশ্বাস আবারা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে পারেন বলেও আনাগোনা শোনা যাচ্ছে। যদিও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়া স্বত্ত্বেও, দীর্ঘদিন গ্রুপিংয়ের কারনে অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থানে ছিলেন তিনি। একই সুরে সুর বেঁধেছেন পারুলিয়ার গরুহাট এলাকার হাফিজুল নামের একজন গ্রীল ও রড সিমেন্টের দোকানদার। একসময়ে চোরাকারবারী হিসেবে হাফিজুলকে সবাই চিনলেও এখন চোরাচালানের টাকায় অন্য ব্যবসা খুলে কথিত নেতা বনে গেছেন। তার ছেলে সাইদুর রহমান সোহাগ এলাকার একজন চিহ্নিত মাদকসেবী, মাদক কারবারী, বখাটে, ইভটিজার ও ছাগল চোর। একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে বখাটে সোহাগের বিরুদ্ধে। এছাড়াও একাধিকবার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এবং ছাগল চুরি করেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সোহাগ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ। একজন সাবেক চোরাচালানী এবং চিহ্নিত মাদকসেবী, মাদক কারবারী, বখাটে, ইভটিজার ও ছাগল চোরের বাবা হয়েও চেয়ারম্যান পদের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা হাস্যরসের খোরাকে পরিনত হয়েছেন হাফিজুল।
এসকল প্রার্থীদের মধ্যে কেবলমাত্র বিএনপির প্রার্থী গোলাম ফারুক বাবু ব্যাতীত সকলেই প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পেতে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, তারই ছোটভাই যুবলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর, মনিরুল ইসলাম মনি ও শফিকুর রহমান সেঝ খোকন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। অর্থ সম্পদের দিক থেকে সকল প্রার্থীর কোন ঘাটতি না থাকলেও, প্রভাব আর জনপ্রিয়তার দিক থেকে সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিন্নুর, বিএনপির গোলাম ফারুক বাবু ও মনিরুল ইসলাম মনি।
ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সাইফুল, মিন্নুর কিংবা মনি যেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাক, যদি বিএনপির প্রাথী গোলাম ফারুক বাবু প্রতিদ্বন্দীতায় অংশ নেন তাহলে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রাথীর সাথে বাবু’র হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। অন্যথায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বিনা বাঁধায় জয়ী হবেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সুদীর্ঘ সময় আমি মানুষের পাশে থেকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। জনগন আমার সাথে আছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি এবং জয়ের ব্যাপারে আমি দৃঢ় আশাবাদী’।
মিজানুর রহমান মিন্নুর বলেন, দীর্ঘদিন উপজেলা যুবলীগের নেতৃত্বে থাকার সুবাদে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়াও এই ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও আমি দায়িত্ব পালন করেছি। মানুষের জন্য ভালো কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আশাকরি উন্নয়নের স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন।
মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, আমি সবসময় দলের জন্য নিবেদিত থেকেছি। মানুষ আমাকে চায়। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা এবং জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
গোলাম ফারুক বাবু বলেন, আমি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান হিসেবে আমি এই ইউনিয়নের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। নির্বাচনের পরিবেশ বিরোধী দলের জন্য সুবিধাজনক হলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো।
প্রার্থীতা ঘোষনা দেয়া এসকল প্রত্যেক প্রার্থীই নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন স্ব-স্ব প্রচারনা। জনসাধারনের সাথে করছেন গণসংযোগ ও মতবিনিময়। ইউনিয়নের রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর গাছে গাছে ঝুলছে প্রার্থীদের নির্বাচনের আগমনী বার্তা ও শুভেচ্ছা সম্বলিত বিভিন্ন সাইজের বাহারি প্যানাসাইন বোর্ড। কেউবা আবার দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়েছেন রং বেরয়ের বাহারি পোষ্টার ও লিফলেট।
এছাড়া ওই ইউনিয়নটিতে জামায়ত কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের আনাগোনা এখনও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বররাসহ ইউপি সদস্য পদে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী গ্রামে গ্রামে নিজেদের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমানে প্রতিটি চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজার, অফিস, মাঠে-ঘাটে প্রতিদ্বন্দী এসব প্রার্থীদের নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন পারুলিয়া ইউনিয়নের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)