আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
ডেস্ক নিউজ:
বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১০ জানুয়ারি এক অনন্য সাধারণ দিন। এই দিনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের এই ঐতিহাসিক দিনে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু।
পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর ৮ জানুয়ারি তারিখে মুক্তি লাভ করেন তিনি। মুক্তির পর প্রথমে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডনে গমন করেন এবং সেখান থেকে দিল্লী হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু।
দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন এবং আলোচনা সভা।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে ও ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে সে বিজয় অপূর্ণ রয়ে যায় এবং ১০ জানুয়ারি তারিখে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতাকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। এরপর ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তার সমগ্র মন্ত্রিসভা, দেশের প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী, নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বঙ্গবন্ধুর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।
ওই দিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। পরিশেষে বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।