দেবহাটায় মাদকাসক্ত চাঁদাবাজ আলম বেপরোয়া: দুদিনে থানায় ৪ অভিযোগ দায়ের
দেবহাটা প্রতিনিধি:
দেবহাটার চিহ্নিত মাদকসেবী ও চাঁদাবাজ আলম ওরফে খোঁড়া আলম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার পুরোনাম রিয়াজুল ইসলাম আলম। মাদকাসক্ত অবস্থায় বাইক এক্সিডেন্টে এক পা ভেঙে ফেলার পর থেকে এলাকায় সে খোঁড়া আলম নামেও পরিচিত।
গত শুক্র ও শনিবার মাদকাসক্ত চাঁদাবাজ আলমের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় পৃথক ৪টি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসব ভুক্তভোগীদের অধিকাংশের কাছে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবী করেছে আলম। চাঁদাবাজ আলমের দীর্ঘদিনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গেল দুদিনে ভুক্তভোগীরা স্বাক্ষী প্রমানসহ তার বিরুদ্ধে থানায় একের পর এক লিখিত অভিযোগ দেয়া শুরু করেছে।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ গুলো তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ তদন্তে সময় ক্ষেপন হওয়ায় থানায় অভিযোগ দিয়ে উল্টো চাঁদাবাজ আলমের রোষানলে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ আস্থা হারিয়ে বলছেন, থানায় অভিযোগ দিয়ে লাভ কি, যদিনা চাঁদাবাজ আলমকে আইনের আওতায় আনা হয়! সেজন্য চাঁদাবাজ আলমকে গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শেখ ইয়াছিন আলীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
দেশে পুলিশ প্রশাসন ও প্রচলিত আইন থাকা স্বত্ত্বেও, কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে মানুষকে জিম্মি করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওয়া কে এই আলম? সে সখিপুর মোড় সংলগ্ন মৃত রাজাউল্লাহ সরদারের ছেলে এবং বিএনপি নেতা এবাদুল ইসলামের (সাবেক মেম্বর) ছোট ভাই। উপজেলা জুড়ে একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও মাদক কারবারি হিসেবেও তার কু-খ্যাতি রয়েছে। সম্প্রতি সে খেজুরবাড়িয়া, টাউন শ্রীপুর, হাদিপুরসহ বিভিন্নস্থানে চাঁদাবাজি করতে গিয়েও মানুষের কাছে লাঞ্চিত হয়েছে।
উপজেলার ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সকল শ্রেনিপেশার মানুষ এখন ওই আলমের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সে দাবী করছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তাদেরকে প্রকাশ্যে খুন-জখমের হুমকিও দিচ্ছে আলম।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, দেবহাটার অন্যতম প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনও সম্প্রতি আলমের চাঁদাবাজীর ভিকটিমে পরিনত হয়েছেন। কখনো গোয়েন্দা পুলিশ, কখনো দুদক কর্মকর্তা, আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দিনে দুপুরে আলম ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে আদায় করছে মোটা অংকের টাকা। অনটেস্ট মোটর সাইকেলে ‘দূনীতি দমন’ লিখে সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেবহাটার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
সম্প্রতি চাঁদাবাজ আলম সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনের কাছে ৫০ হাজার টাকা, ঈদগাহ বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক ভোলার কাছে ১ লক্ষ টাকা এবং কুলিয়ার ডিস লাইনের ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামানের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে।
এঘটনায় গেল দুদিনে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক ভোলা ও ডিস ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান চাঁদাবাজির অভিযোগে ওই আলমের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় পৃথক তিনটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে এসকল নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেবহাটা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকেও চাঁদাবাজ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রেসক্লাবের নাম-পরিচয় ব্যবহার করায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষমান রয়েছেন আরোও ডজন খানেক ভুক্তভোগী। সেজন্য অবিলম্বে এই চিহ্নিত চাঁদাবাজকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।