সাতক্ষীরার ঝাউডাঙায় রাধাকৃষ্ণ নাট মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন

রঘুনাথ খাঁ:

সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া রাধাকৃষ্ণ নাট মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় কোদাল দিয়ে মাটি কেটে এর উদ্বোধন করেন প্রকল্প সভাপতি চিত্তরঞ্জন ঘোষ।

ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফেণ্ডার ফোরামের সদস্য সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাট মন্দির বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উমাপদ মজুমদার, মন্দির কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য ডাঃ মোহন কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ পাল, সহসভাপতি সুবীর ঘোষ, সহ সম্পাদক শিক্ষক বিশ্বরঞ্জন ঘোষ, ইউপি সদস্য শিক্ষক তারক চন্দ্র পাল, অধীর চন্দ্র ঘোষ, রাজু ঘোষ, সুকুমার পাল, পুরোহিত অবারিত দাস, পুরোহিত রঞ্জন কুমার পাল, পুরোহিত ভোলানাথ দাস প্রমুখ।

প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৯১ সালে ওয়ারিয়া গ্রামের অনিল কৃষ্ণ ঘোষের দানকৃত ছয় শতক জমি ও নয় শতক কোন জমিতে রাধাকৃষ্ণ মন্দির স্থাপিত হয়। প্রতি বছর শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব এর রথযাত্রা শেষে জগন্নাথ দেব, সুভদ্রা ও বলরামের মুর্তি এ মন্দিরে রাখা হতো। ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগন্নাথ দেব, রাধাকৃষ্ণসহ আরো দু’টি মুর্তিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুরোহিত রঞ্জন কুমার পাল বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে ২৯ সেপ্টেম্বর সদর থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ তদন্তকালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কাউকে সনাক্ত করতে না পারায় অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার বাদিসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। একইভাবে ব্রহ্মরাজপুর রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে মন্দিরে ঢুকে নাশকতা সৃষ্টিকারিরা ফিল্মি স্টাইলে বল্লভ দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে তাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতিকে দিয়ে একটি দস্যুতার মামলা করানো হয়। ঢাকা থেকে ফিরিয়ে আনার তিন মাস পর বাড়িতে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান ভবসিন্ধু বর। অথচ তৎকালিন পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান হিন্দু নেতাদের তার অফিসে ডেকে হেলিকপ্টার ভাড়ার টাকা আদায় করেন। পুলিশ ওই পুরোহিতের উপর হামলাকারিদের সনাক্ত করতে পারেনি। ২০১৬ সালে দেবহাটার টিকেট গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ঘিরে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা কালী প্রতিমা ভাঙচুর করলেও মামলার কোন আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহীত হয়নি। ২০১৫ সালে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কল্যানপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর ও ২০১৫ সালে সদরের বাবুলিয়া মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ২০১৪ সালে শ্যামনগরের নকীপুরে গীতা পাঠের আসরে সন্ত্রাসী হামলা হলে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। যদিও আজো তাদের বিচারন হয়নি। কালিগঞ্জের ফতেপুর হাইস্কুল মাঠে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ম স্ত নাটকে মহানবীকে কটুক্তি সংক্রান্ত দৃষ্টিপাত পত্রিকার মিথ্যা সংবাদে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রামের শিক্ষকা মিতা রানী বালা, লক্ষীপদ মণ্ডলসহ ১২টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু স্থাপনা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ২০১৪ সালে চার্জশীটভুক্ত আসামী দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক আবু তালেব মোল্লা, বার্তা সম্পাদক ডিএম কামরুল, দক্ষিণ শ্রীপুর প্রতিনিধি শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান ও যুবলীগ নেতা মিন্টুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকার কারণে আজো আসামীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এসবের কারণে স্বাধীনতার আসন্ন সুবর্ন জয়ন্তীর সময়েও সাতক্ষীরার হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হিন্দুরা রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। তাই পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে রাধাকৃষ্ণ নাটমন্দির তৈরির আগে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে। শুধু প্রশাসনের উপর ভরসা করেই নয়, নিজেদেরকে সজাগ থাকতে হবে।

ঝাউডাঙার জগন্নাথ দেব মন্দিরের বিচারাধীন জমি দখল দেখিয়ে পাথরঘাটা গ্রামের ১০জন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ২০১৭ সালে ডিসিআর নিলেও তার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ওই মহলটি আবারো বেপরোয়া হয়ে ওই ডিসিআর নবায়ন করে মন্দিরের জায়গা জবরদখল করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে। তারা ঝাউডাঙা বাজারের ইজারা গ্রহীতা ও তার লোকজনদের নামে থানায় জিডি করেছে। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়। রোববার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এসএম মাহমুদুর রহমান মন্দিরের জমিতে যেখানে হাট বাজার বসে সেই জমিতে ডিসিআর দেওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে বলেন, তিনি সদরের সহকারি ভূমি কমিশনার থাকাকালে এ মন্দিরের জন্য অনেক কিছু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিনি সদর সহকারি ভূমি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)