হাসিনা-মোদি বৈঠকে ৯ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা

ডেস্ক নিউজ:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ৯টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দুই দেশের মধ্যকার ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বিভিন্ন খাতে ৯টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে এখনো কাজ করছেন। – বাসস

এর আগে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই বৈঠকে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের পুরনো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগটি সুদীর্ঘ ৫৫ বছর পর পুনরায় উদ্বোধন করা হবে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল।

মোমেন বলেন, এই বৈঠকে পানি বন্টন, কোভিড সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও রোহিঙ্গা সংকটসহ প্রধান সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরবে ঢাকা।

পানি বন্টন
আসন্ন বৈঠকে দু’দেশে প্রবাহমান অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে মোমেন ইঙ্গিত দেন। ঢাকা দু’দেশের মধ্যে বয়ে চলা প্রধান সাতটি নদী মনু, মুহুরি, গোমতি, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তার পানি বন্টনের ইস্যুটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিগগিরই, এমনকি যদি সম্ভব হয় আগামী মাসেই এই অভিন্ন সাতটি নদীর পানি বন্টন ইস্যু সমাধানের লক্ষ্যে একটি কাঠামো গড়ে তুলতে মন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হবে।

মোমেন বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পটিও জেআরসি বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা হবে। ১০ বছর আগে ২০১০ সালে নয়া-দিল্লীতে সর্বশেষ জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চুক্তিটি অনেক আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমনকি ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তির প্রতিটি পাতায় স্বাক্ষর করা হয়েছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে দিল্লী চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য বারংবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চূড়ান্ত চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা।

মন্ত্রী বলেন, এখন আমরা (ঢাকা) বিষয়টি তাদের (নয়া-দিল্লী) ‘প্রতিশ্রুতির সম্মানের’ উপর ছেড়ে দিয়েছি। কারণ বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে সব সময় এই ইস্যুটি তুলে আমরা তাদের অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে চাই না।

মোমেন বলেন, এই চুক্তিটি বাস্তবায়নের প্রশ্নে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

কোভিড সহযোগিতা
মোমেন বলেন, কোভিড মহামারি ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে স্থান পেতে পারে। ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বলে এরইমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বৈঠকে বিষয়টি আরো জোরালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডোজ করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

রোহিঙ্গা সংকট
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতকে জাতিসংঘে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাবে ঢাকা। এ বছর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে সমর্থন দিয়েছে।

মোমেন বলেন, আমরা তাদের বলবো, যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হয় তবে গোটা অঞ্চলেই অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। যা মিয়ানমারে আপনাদের (ভারত) বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

ভারত আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ইউএনএসজি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছে। ঢাকা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশটির কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমর্থন চাইবে।

সীমান্ত হত্যা
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির ঘটনার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানানো হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং আমরা অবশ্যই ভারতের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইব।

বাণিজ্য সহযোগিতা
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নয়া-দিল্লীর প্রতি আহ্বান জানাবেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বাধা হ্রাসের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানাবো।

মোমেন বলেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যেন নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে, সে লক্ষ্যে দু’দেশের মান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি ‘অভীন্ন গুণগত মান’ ঠিক করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পাট আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান এন্টি-ডাম্পিং পলিসি প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবে ঢাকা।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতে উৎপাদন করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে এখন এদেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতে রফতানি করতে চাইছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ভারতের সহায়তায় ভুটানের মতো তৃতীয় কোনো দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইছে। ভুটান বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইচ্ছুক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)’র আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতিতে সহায়তার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাবেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে ইন্ডিয়ান ক্রেডিট লাইনের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশি পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতীয় হাই কমিশনারকে অন্তর্ভূক্ত করে একটি কমিটি গঠন করেছি।

যোগাযোগ
মোমেন বলেন, চলমান মহামারিতে দু’দেশের মধ্যে এখন থেকে ‘এয়ার বাবল এরেঞ্জমেন্টের’ আওতায় পুনরায় আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ঢাকা দু’দেশের মধ্যে স্থল ও রেলপথেও সাধারণ মানুষের ভ্রমণ পুনরায় চালু করতে ইচ্ছুক।

এর আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা ও মোদি ভার্চুয়ালি চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল রুটটি পুনরায় চালু করবেন। এর ফলে ভারতের কুচবিহারের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চিলাহাটির মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হবে। এই রুট দিয়ে একটি কার্গো ট্রেন দু’দেশে মধ্যে চলাচল করবে।

স্বাধীনতা সড়ক
মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ ঘোষণা দিবেন। সড়কটি বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে মেহেরপুরের মুজিবনগরে জিরো লাইনে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বিদ্যমান।

তিনি আরো বলেন, সড়কটি যে স্থানে অবস্থিত সেখানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। সড়কটি দু’দেশের জনগণের জন্য খুলে দেয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)