মোটর সাইকেল রাখায় আপত্তি – জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও এক ব্যবসায়িকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ডিবি পুলিশ
রঘুনাথ খাঁ:
একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে মোটর সাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে বচসার এক পর্যায়ে জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এক ব্যবসায়িকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক ফারুখ হোসেন, তার তিন সহযোগী পুলিশ কর্মকর্তা ও ফারুখ হোসেনের স্ত্রী সোমবার দুপুর ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের টাউন বাজার তিন রাস্তার মোড় ও কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রেখে এ নির্যাতন চালায়।
সাতক্ষীরা শহরের টাউন বাজারের নোমান ফাস্ট ফুডের মালিক বাচ্চু হোসেন জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি তার দোকান খোলার সময় ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন তার স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে তার দোকানের একাংশ জুড়ে এপাচি মোটর সাইকেল রাখেন। দোকান খোলার সমস্যা হবে বলে আপত্তি করলেও সাদা পোশাকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সস্ত্রীক পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উজ্জল বস্ত্রালয়ে চলে যান। এ সময় তিনি উপরে যেয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবারো সাইকেল সরানোর কথা বললে পুলিশ দম্পতি রেগে যেয়ে তাকে মারতে আসেন। এ সময় তিনি তার দোকান মালিক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুর ভাই লিটনকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে নীচে চলে আসেন।
উজ্জল বস্ত্রালয়ের কর্মচারি সালাউদ্দিন জানান, মালিক শেখ সাদেক হোসেন উজ্জল ওই পুলিশ কর্মকর্তার মোটর সাইকেল সরানোর জন্য অনুৃরোধ করে চাবি চান। এতে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ দম্পতি মালিক উজ্জলকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। নিরুপায় হয়ে মালিক ওই পুলিশ কর্মকর্তার পায়ে ধরে ক্ষমা চান। এ সময় চলে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই লিটন। ঘটনা জানতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে লিট্ন চলে যাওয়ার পর সেখানে চলে আসেন জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জুলফিকার হোসেন উজ্জল। বস্ত্র ব্যবসায়ি উজ্জলকে মারপিট করার প্রতিবাদ করায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকেও মারতে যান। অবেশেষে যুবলীগ নেতা উজ্জল, ব্যবসায়ি উজ্জল ও পুলিশ দম্পতি নীচে নেমে আসার পর কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য মোস্তাক আলী ঘটনাস্থলে চলে আসেন। প্রায় একইসাথে ফাঁড়ির পাশে ছোট প্রাইভেট কার রেখে চলে আসেন তিন ডিবি পুলিশ সদস্য। পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছে এত বড় সাহস কার বলতে বলতে ডিবি পুলিশের প্রাইভেট চালিয়ে আসা ওই পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে লাঠি বের করে ব্যবসায়ি উজ্জল ও যুবলীগ নেতা উজ্জলকে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। এ সময় কিল ,চড় ও লাথি মারেন ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও তার স্ত্রী। ক্রমশঃ লোক সমাগম হতে থাকায় দু’ উজ্জলকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে আটক রেখে দ্বিতীয় দফায় বেধড়ক পেটানো হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে স্থানীয়রা ফাঁড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে। ঢুকতে না পেরে তারা ফাঁড়ি ঘেরাও করে। সদর থানার একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যুবলীগ নেতা উজ্জলকে ছাড়া হলেও আটক রাখা হয় ব্যবসায়ি উজ্জলকে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মা’সহ স্বজনরা যেয়ে ব্যবসায়ি উজ্জলকে ছাড়িয়ে আনেন ও পরে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ি সিবি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপরপরই পুলিশ ঘটনার প্রমান লোপাট করতে তাদের দোকনের সিসি ক্যামেরায় বিশেষ অংশ খুলে নিয়ে চলে যায়।
কাটিয়া মাষ্টারপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান ও তার ভাই আমিনুর রহমান বলেন, তার ভাই যুবলীগ নেতা জুলফিকার হোসেন উজ্জলকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরপরই পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুঁটে আসেন। তারা জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠণিক সম্পাদক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম রানাকে ম্যানেজ করে তাড়াতাড়ি করে সদর হাসপাতাল থেকে উজ্জলের ছাড়পত্র নিয়ে নেয়। তারা তাকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে সিবি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তারা আপত্তি করেন। তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ রাজী হয়। একপর্যায়ে জেলা পুলিশের একটি মাইক্রোবাসে করে উজ্জলকে তুলে জোর করে সিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি করার সময় মেডিকেল সার্টিফিকেট বা চিকিৎসা পত্র নিতে পারেব না বলে সিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দু’ ভাইয়ের কাছ থেকে একটি কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেয়। ভর্তির পরপরই পুলিশ কর্মকর্তারা দোষী উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহন করার কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। এ সময় ব্যবসায়ি উজ্জলকেও চিকিৎসার জন্য সিবি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডান হাতে রক্তাক্ত জখম ব্যবসায়ি উজ্জলকেও বিষয়টি নিয়ে আরে বেশিদূর না যাওয়ার জন্য বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সালাউদ্দিন, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম রানা, মোঃ বাচ্চু হোসেন, সাহেব আলী, পলাশ শেখসহ কয়েকজন জানান, একটি মোটর সাইকেল সরিয়ে রাখার অনুরোধ করাকে কেন্দ্র করে পুলিশ যে তাণ্ডব চালালো তা যে কোন বর্বরতাকেই হার মানায়।
যুবলীগ নেতা জুলফিকার হোসেন উজ্জল বলেন, তাদের উপর পুলিশ যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি জেলা যুবলীগের শীর্ষপর্যায়ে থেকে যেভাবে নির্যাতিত হলেন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কি ঘটে তা জানতে কারো বাকী নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় প্লটেফর্মে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শেখ সাদিক হোসেন উজ্জল বলেন, পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে ব্যবসা করার মানসিকতাটাই হারিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরণের ঘটনা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রেও জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে।
সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি দূঃখজনক। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি উভয়পক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে দোষী পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার মহোদয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।#