মানসিক হাসপাতাল: রোগী আটকে টাকা আদায় ও নির্যাতন
নিউজ ডেস্ক:
বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা বেশিরভাগ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও মানসিক হাসপাতালেই রোগী আটকে টাকা আদায় ও নির্যাতন করা হয়। অথচ এসব হাসপাতালে নিবিড় সেবা দেয়ার কথা।
জানা গেছে, মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে সারাদেশেই চালানো হচ্ছে মানসিক হাসপাতাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় এক হাজার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও মানসিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই রয়েছে ১০০টির মতো। এক হাজারটির মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৩২৪টির।
১০ শয্যার একটি মানসিক হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখার শর্তে অনুমোদন দেয়া হয়। শয্যা যত বেশি আনুপাতিক হারে এর সংখ্যাও বেশি হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাদকাসক্ত ও মানসিক হাসপাতালে কাউকে ভর্তি করলেই বিশেষ কক্ষে চার-পাঁচ দিন আটকে রাখা হয়। কাউকে কাউকে শিকল বেঁধে করা হয় শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতন করার জন্য রয়েছে টর্চার সেল। রোগীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ আগে থেকেই।
ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদকাসক্ত এক ব্যবসায়ীকে তিন বছর আটকে রেখে নির্যাতন করে রাজধানীর হলি লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
মায়ের মৃত্যু সংবাদে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে হাতিরঝিল থানায় জিডি করেন। পরে হলি লাইফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। যার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনোভাবেই রোগীকে চিকিৎসার নামে নির্যাতন ও তিন থেকে চার মাসের বেশি নিরাময় কেন্দ্রে রাখা যাবে না। অথচ হলি লাইফের বিরুদ্ধে শয্যা সংখ্যার তিন গুন বেশি রোগী রাখা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম (ছন্ধনাম) ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমাকে আটকে রেখে মারধর করেছে। সেখানে তাদের কথার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ওখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই মাদক সেবন করে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, তার জন্য বাসা থেকে ১০টি পাঞ্জাবি পাঠানো হয়। কিন্তু তাকে দেয়া হয় দু’টি। বাকি পাঞ্জাবি কেন দেয়া হলো না জানতে চাইলেই তাকে হাত-পা বেঁধে রড দিয়ে পেটানো হয়। তাদের পেটানোর ক্ষত চিহ্ন এখনো তার হাত-পায়ে রয়েছে।
প্রায়দিনই ওরা টর্চার সেলে কাউকে না কাউকে এনে নির্যাতন করে বলেও জানান তিনি।
অনুমোদনহীন এসব মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা ও নির্যাতনে অনেকের প্রাণহানিও হয়েছে।
জানা গেছে, শয্যাসংখ্যা অনুপাতে যে সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা অধিকাংশ মানসিক হাসপাতালে তার কোনো বালাই নেই। এক-দু’জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে হাসপাতাল। নেই কোনো চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওষুধ নয়, রোগীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং দেয়ার মতো জনবলও নেই।
মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বি ব্লকে অবস্থিত ঠিকানা সাইক্রিয়াটিক অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশনের মানসিক চিকিৎসার অনুমতি রয়েছে। ২০ শয্যার এই মানসিক হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত জনবল।
কল্যাণপুরের কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল। ১০ শয্যা হাসপাতালে সম্প্রতি রোগী ছিল ২০ জন। এদের মধ্যে ছিল মাদকসেবীও। কিন্তু এ মানসিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যের অনুমোদন থাকলেও অনুমতি নেই মাদকদ্রব্য অধিদফতরের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক হাবিবুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, মানসিক বা অন্য যেকোনো রোগের চিকিৎসা হোক সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতিহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদকাসক্তের চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে অন্য কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করে দেয়ার কথা জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী।