সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলা নাগরিক কমিটির ১৩ দফা প্রস্তাবনা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (এক্সটেনশন)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী গত ২ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৪ কিমি. ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে বেতনা নদী এবং ৩৭ কিমি. ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে মরিচ্চাপ নদীর পলি অপসারণ করা হবে। পোল্ডার অভ্যন্তরে বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর সাথে সংযুক্ত ৩৪৪.২২ কি.মি. বিভিন্ন খাল সংস্কার ও পুনঃখনন করা হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রক্ষার্থে বিভিন্ন পোল্ডারে বিভিন্ন লোকেশনে ৬টি রেগুলেটর/¯øুইসগেট পুণর্গঠন করা। বিদ্যমান রেগুলেটর/¯øুইস গেটের মেরামত/পুনরাকৃতিকরণ ২১টি। বন্যার ঝুঁকি থেকে এলাকাকে রক্ষার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা ১১৩.১২ কিমি.। বেতনা নদীর ডান তীরের ২ নং পোল্ডারে ঢাল প্রতিরক্ষামূলক কাজ ১.৭০ কিমি। আরসিসি ঘাটলা নির্মাণ ৪টি।

উক্ত প্রকল্প সম্পর্কে জেলা নাগরিক কমিটির এক মতবিনিময় সভা ১৪ নভেম্বর বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা পুরাতন আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো.আনিসুর রহিম।

সভার বক্তারা বলেন, উক্ত প্রকল্পভুক্ত বেতনা, মরিচ্চাপ, সাপমারা, লাবন্যবতী, কোলকাতার খাল, প্রাণ সায়র খালসহ ৮২টি খালের প্রায় সবকটিই গত ১০ বছরের মধ্যে খনন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কর্মসৃজন প্রকল্প, বøু-গোল্ডসহ বিভিন্ন এনজিও এগুলো বাস্তবায়ন করে। বেড়িবাঁধও নির্মাণ করে। কিন্তু সেগুলো কোন উপকারে আসেনি। বরং বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর ভিতরে অবস্থিত ৩০০/৪০০ ফুট চওড়া জলাধারের মাঝ বরাবর ৫০/৬০ ফুট খনন করে বাকী অংশ ভরাট করা হয়েছে। খালগুলোরও একই অবস্থা। একারণে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খননের পর থেকেই সাতক্ষীরা শহরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
একারণে বর্তমান প্রকল্পটি অর্থবহ করা এবং উদ্দেশ্য পূরণে সফল করতে মতবিনিময় সভা থেকে ১৩ টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনা সমূহঃ

০১. ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ পুর্নস্থাপনে লাবন্যবতীর দু’মুখে স্থাপিত শাখরা-টিকেট এবং সাপমারার দু’মুখে স্থাপিত হাড়দ্দহা-কামালকাটি ¯øুইসগেট অপসারণ অথবা দুই নদীর সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য ¯øুইসগেটের পার্শ্ব দিয়ে বেড়িবাঁধ কেটে বিকল্প চ্যানেল তৈরী করতে হবে।

০২. সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়র খালের সাথে বেতনা নদীর পুর্নসংযোগ স্থাপনে খেজুরডাঙ্গী ¯øুইসগেট এবং মরিচ্চাপ নদীর পুর্নসংযোগ স্থাপনে এল্লারচার ¯øুইসগেট (বর্তমানে অস্তিত্বহীন) অপসারণ অথবা পার্শ্ব দিয়ে বেড়িবাঁধ কেটে বিকল্প চ্যানেল তৈরী করতে হবে।

০৩. কোলকাতার খাল এবং শ্রীরামপুর-বাকাল খালের দু’মুখের সকল বাধা অপসারণ করতে হবে।

০৪. ইছামতির পানি প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পূর্বেই লাবন্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ, কোলকাতার খাল ও শ্রীরামপুর-বাঁকাল খালের বেড়িবাঁধ যেখানে প্রয়োজন সেখানে উচু ও মজবুত করতে হবে এবং বিলের পানি নিষ্কাশনের খালের মুখে থাকা ¯øুইস গেটগুলো সংস্কার করতে হবে। এছাড়া মরিচ্চাপ ও বেতনা নদীর সংযোগ স্থাপনকারী অন্যান্য খালগুলো উন্মুক্ত করে ¯øুইস গেটগুলো সংস্কার করতে হবে।

০৫. প্রকল্পভুক্ত সকল নদী-খালের সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সীমানা পিলার স্থাপন করতে হবে। নদী খালের ম্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

০৬. প্রকল্পভুক্ত নদী খাল খননের সকল মাটি নদী খালের সীমানার বাইরে অবক্ষেপণ করতে হবে। কোন আবস্থাতেই নদী-খালের মধ্যে ডাম্পিং করে নদী ভরাট করা যাবে না।

০৭. গ্রাম-শহরের বর্ষার পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখে মাছ চাষের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিদিষ্ট জোন সৃষ্টি করতে হবে। জোনের বাইরে কোন ঘের করতে দেওয়া যাবে না এবং নদী-খালের বেড়িবাঁধ ও সরকারী রাস্তাকে কোনভাবেই মাছের ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি লোকালয় থেকে বিলে, বিল থেকে খালে এবং খাল থেকে নদীতে প্রবাহিত হওয়ার সময় তীব্র ¯্রােত সৃষ্টির মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক খনন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করতে দেওয়া যাবে না।

০৮. শালিখা নদীর সাথে বেতনা নদীর পুর্নসংযোগ স্থাপন করতে হবে।

০৯. ইছামতি নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ার পর লাবন্যবতী, সাপমারা, কোলকাতার খাল, শ্রীরামপুর-বাঁকাল খাল, মরিচ্চাপ ও খোলপেটুয়া নদী খনন ছাড়াই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সেক্ষেত্রে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত হলে আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, খাজরা, আনুলিয়া এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত খোলপেটুয়া নদীর ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ হবে এবং এলাকা ভয়াবহ নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ইছামতির ঐ পানির আর একটি প্রবাহ কোলকাতার খাল ও শ্রীরামপুর-বাঁকাল খালের মাধ্যেমে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়র খাল দিয়ে বেতনা নদীর জোয়ার-ভাটার সাথে সংযুক্ত হবে। একইভাবে ইছামতির খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ার-ভাটার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে বুধহাটার গাং দিয়ে বেতনা নদী প্রবাহমান হবে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন ¯øুইসগেট নির্মাণের পূর্বে ইছামতি এবং মরিচ্চাপ নদীর জোয়ার-ভাটার ব্যবধান দুই ঘন্টা ছিল। অর্থাৎ ইছামতিতে জোয়ার শুরু হলে সেই জোয়ারের পানি লাবন্যবতী-সাপমারা হয়ে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া দিয়ে ভাটিতে প্রবাহিত হতো। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় খোলপেটুয়া-মরিচ্চাপে জোয়ার হলে সেই জোয়ারের পানি লাবন্যবতী-সাপমারা হয়ে ইছামতিতে ভাটি হতো।
আবার কোলকাতার খাল, শ্রীরামপুর-বাকাল খাল দিয়ে ইছামতির জোয়ারের পানি সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়র খাল দিয়ে বেতনা নদীতে যেয়ে ভাটিতে প্রবাহিত হতো। একই প্রক্রিয়ায় শালিখা, কপোতাক্ষসহ প্রকল্পের বাইরের এলাকায় জোয়ার-ভাটা হতো।
এই আন্তঃসংযোগের কারণে নদী-খাল প্রবাহমান থাকায় পলি পড়ে ভরাট হওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু আন্তঃসংযোগ বন্ধ করাতেই এবং অন্যান্য কারণে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

১০. ইছামতির পানিতে নদী-খালের এই স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার পরও বেতনা আববাহিকার উজানে খুব বেশী প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। ফলে সেখানে পলি পড়ে দ্রæত নদী ভরাটের আশংকা থেকেই যাবে। এজন্য সুবিধাজনক স্থানে টিআরএম চালু করতে হবে। একই সাথে অন্যান্য নদী-খালের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর নিচু বিল উচু করতে এবং যেখানে পর্যাপ্ত ¯্রােত সৃষ্টি হবে না সেই সমস্ত এলাকায়ও টিআরএম চালু করতে হবে।

১১. নদী খাল খনন এলাকায় জন মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. প্রকল্পের জন্য একটি টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রæপ তৈরী করতে হবে। যারা সাপ্তাহিক/মাসিক প্রতিবেদন দিবেন এবং এই সম্পর্কিত একটি ওয়েব সাইট তৈরি করতে হবে। যেখানে নাগরিকরা পরামর্শ ও মতামত প্রদান করবেন।

১৩. জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুযায়ী ‘সকল নদী খালর ইজারা বাতিল’ এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, অপারেশ পাল, মধাব চন্দ্র দত্ত, সুধাংশু শেখর সরকার, শেখ হারুণ অর রশিদ, ডা. সুশান্ত কুমার ঘোষ, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, এড. মনির উদ্দিন, মনোরঞ্জন বন্দোপধ্যায়, এড. আল মাহামুদ পলাশ, আব্দুল বারী, ফরিদা আক্তার বিউটি, আব্দুস সামান, মো.মনিরুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার, আলী নুর খান বাবলু, জিএম মনিরুজ্জামান, এড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)