দেবহাটার সাপমারা খালপাড়ে নির্মাণাধীন প্রভাবশালীদের সেই অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করে দিয়েছে ইউএনও
নিজস্ব প্রতিনিধি:
দেবহাটার সাপমারা খালপাড়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর, সেসব অবৈধ স্থাপনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার।
সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার সরেজমিনে সাপমারা খালের দুপাশে পরিদর্শন শেষে প্রভাবশালী ভুমিদস্যু আব্দুল আজিজ ও আইয়ুব হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের নির্মানাধীন অবৈধ স্থাপনার নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন।
এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীনের বদলী ও নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তারের যোগদানের মধ্যবর্তী সময়কে সুযোগ বুঝে কাজে লাগিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নাম ব্যবহার করে সাপমারা খালের দুপাড়ের উচ্ছেদকৃত সরকারী জমিতে বেজ ঢালাই দিয়ে কংক্রিটের অবৈধ স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করে সখিপুরের সাবেক চেয়ারম্যান সালামতুল্যা গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ ও পারুলিয়ার ওহাব ডাক্তারের ছেলে আইয়ুব হোসেনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী।
সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পারুলিয়া-সখিপুর মুল ব্রীজের দক্ষিন পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কারী প্রভাবশালী আব্দুল আজিজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষ নেতা এখন থেকে নিয়মিত পারুলিয়াতে বসবাস করবেন। পারুলিয়া-সখিপুরে বসার জন্য নেতার একটি নির্দিষ্ট জায়গা দরকার, তাই তিনি ওই নেতার জন্য সাপমারা খালপাড়ে বেজ ঢালাই দিয়ে কংক্রিটের অফিস বানাচ্ছেন।
অন্যদিকে সখিপুর বাজার ব্রীজের উত্তর পাশে অপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ওহাব ডাক্তারের ছেলে আইয়ুব হোসেন বলেন, নির্মানাধীন অবৈধ স্থাপনাটি স্বয়ং জেলা আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষ নেতাই নির্মান করছেন, তিনি কেবলমাত্র নির্মান কাজ দেখাশুনা করছেন।
অভিযুক্ত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কারীদের দেয়া এমন তথ্যের পর বিষয়টি সম্পর্কে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাপমারা খালের উচ্ছেদকৃত সরকারি জমিতে আমি কাউকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেইনি। যারা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে তারা তাদের সুবিধার্থে আমার নামকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও আমি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
অভিযুক্ত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কারীদের দেয়া এমন তথ্যের পর বিষয়টি সম্পর্কে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাপমারা খালের উচ্ছেদকৃত সরকারি জমিতে আমি কাউকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেইনি। যারা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে তারা তাদের সুবিধার্থে আমার নামকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও আমি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির দেয়া এমন সুস্পষ্ট বক্তব্যের পর রবিবার জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাপমারা খালপাড়ে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে উল্লেখ করে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দেবহাটা জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। একদিকে নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন, আর অন্যদিকে অপকর্ম আড়াল করে বহাল তবিয়তে নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাপ শুরু করে অবৈধ স্থপনা নির্মাণকারী ভুমিদস্যু আব্দুল আজিজ, আইয়ুব হোসেনসহ তাদের সহযোগীরা।
সবশেষে বুধবার ঘটনাস্থলে পৌছে এসকল অবৈধ স্থাপনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সবগুলো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে মাপজরিপ করে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বলা হয়েছে। যদি কেউ নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান ইউএনও।
উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের শুরুর দিকে দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সাপমারা খালের দুপাড়ের অগনিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সরকারী ১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে নদী খনন পর্যায়ে খালটির পুনঃখনন কার্যক্রম শেষ করে।
Please follow and like us: