বন্দীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেলেন কারারক্ষী

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বন্দীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৮ জুলাই থেকে ওই বন্দীর স্ত্রীকে জিম্মি করে রেখেছেন মামুন হোসেন নামের ওই কারারক্ষী।

গত ৫ বছর ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত মামুন হোসেন। তিনি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকার বাসিন্দা। বিবাহিত ওই কারারক্ষী কারাগারের ব্যারাকে একাই থাকেন।

আর ভুক্তভোগী বন্দী মোহাম্মদ আকাশ নগরীর ষষ্ঠিতলা এলাকার বাসিন্দা। তার আট বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রীর নাম পারভীন আক্তার (২৮)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌর এলাকার রহমতপাড়া মহল্লার নাসির উদ্দিনের মেয়ে। ১৪ বছর আগে রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা আকাশের সঙ্গে পরিবারের সম্মতিতে পারভীনের বিয়ে হয়।

পারভীন আক্তারের বড় বোন শিরিন আক্তার জানান, আকাশ জেলে যাওয়ার পর ওই কারারক্ষীর সঙ্গে পারভীনের মোবাইলে যোগাযোগ হয়। এরপর তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে যান। গত কোরবানির ঈদের তিন দিন আগে ওই কারারক্ষীর সঙ্গে পারভীন নিরুদ্দেশ হন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছিলাম পারভীন স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে। কিন্তু পরে ফোন করে আমাদের জানিয়েছে ওই ছেলে তাকে জিম্মি করে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছেন। তাকে বিয়ে না করেই স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করছেন।’

এই তথ্য পেয়ে তারা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি। এনিয়ে তারা মামলা দায়েরের কথা ভাবছেন।

একই ভাষ্য পারভীনের স্বামী আকাশেরও। তিনি বলেন, তিনি সোনালী ব্যাংকে নগরীর একটি শাখায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন। সেখান থেকে ফেরার পথে নগর ডিবি পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন মাদক কারবারি হিসেবে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় তার কাছে টাকা দাবি করে পুলিশের ওই দলটি। কিন্তু তিনি সেই দাবি পূরণ করতে পারেননি। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়। কারাবন্দী থাকাকালীন কারারক্ষী মামুন হোসেনের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। তিনি স্ত্রীর মোবাইল নম্বর দিয়ে ওই কারারক্ষীকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর দেয়ার অনুরোধ করেন।

এরপর পারভীনের সঙ্গে ওই কারারক্ষী পরকীয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের গোপন ভিডিও ধারণ করে তাকে জিম্মি করেন কারারক্ষী। তার স্বামীর মাদক মামলায় যাবজ্জীবন হবে জানিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যান। পরে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন।

ভুক্তভোগী আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন ওই কারারক্ষী।

তিনি বলেন, ‘তিনি নগরীর নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে দোকান করেন। সেই দোকানে মাদক রেখে ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার দুই এসআই। এরপর থেকে তিনি দোকান বন্ধ রেখে আত্মগোপন করেছেন। এই ঘটনার প্রতিকার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী আকাশ।

এদিকে ওই নারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন কারারক্ষী মামুন হোসেন। তিনি দাবি করেন, ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো অনৈতিক সম্পর্ক নেই। তিনি বিবাহিত। তার সংসার আছে। তিনি এমনটি করতেই পারেন না। ওই নারীকে স্বামীর কাছ থেকে ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন কারারক্ষী মামুন হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও রাজশাহীর সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন ও জেলার মাসুদুর রহমানের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এনিয়ে তাদের মন্তেব্য মেলেনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)