গ্রাম ডাক্তারের রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ কর্মসুচির নামে জেলায় আয়োজক কমিটির ৩০ লাখ টাকা লুটপাট
আসাদুজ্জামান:
সাতক্ষীরায় গ্রাম্য ডাক্তারদের সচেতনতা, পেশাগত দক্ষতা ও মান উন্নয়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ কর্মসুচির নামে ৩০ লাখ টাকা লুট পাটের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে। ২০০৯ সালে যারা এই প্রশিক্ষনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক হুমকি দিয়ে মাথা পিছু সাড়ে ৮ হাজার টাকা গ্রহন করে আবারও তাদের এই প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মৌচাকের আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কাছ থেকে গ্রাম্য ডাক্তারদের সচেতনতা, পেশাগত দক্ষতা ও মান উন্নয়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রিফ্রেশার প্রশিক্ষণের জন্য গত ৬ জুলাই একটি অনুমোদন লাভ করে। সে অনুযায়ি তারা আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গ্রাম্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও কালিগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তগণকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি এই তিন উপজেলার ৪৭০ জনের প্রশিক্ষণের জন্য একটি তালিকা সিভিল সার্জন অফিসে জমা দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলার ডাক্তারদের ভাগ করে দু’টি সেশনে ৭ জন ডাক্তার দ্বারা এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যা তিন সপ্তাহের জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩ আগষ্ট, কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৪ আগষ্ট থেকে শুরু হয়েছে। একই সাথে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ দিনের জন্য এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। যা শেষ হবে ২২ সেপ্টেম্বর। দুটি শিফটে প্রশিক্ষনের জন্য একজন ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। শর্ত মোতাবেক আয়োজক প্রতিষ্ঠান জেলা সিভিল সার্জনের সাথে আলোচনা করে তিন সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণের যাবতীয় বাজেট প্রণয়ণ করার কথা। একইভাবে ইতিপূর্বে গ্রাম্য ডাক্তার কল্যাণ সমিতি কর্তৃক দাখিলকৃত ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিকুলাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত“ গ্রাম্য ডাক্তার প্রশিক্ষণ সহায়িকাটি” বৈধভাবে সংগ্রহ করে ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে।
গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির কালিগঞ্জ শাখার সদস্য ভাড়াসিমলা গ্রামের শেখ নাছিম, একই গ্রামের ডাঃ কাজী আব্দুল আজিজ, নলতার ডাক্তার সূর্যকান্ত সরকার ও বাবুল আক্তার জানান, গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির ১০০ জন সদস্য এ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে মাথা পিছু এক হাজার টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমুদয় টাকা না দিলে তাদের সনদপত্র দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য ডাঃ মিলন ঘোষণ, ডাঃ মোমিন ও ডাক্তার আবুল কাশেম। এছাড়া গ্রাম্য ডাক্তার প্রশিক্ষণ সহায়িকা পত্রটি তাদের ১০০জনের মধ্যে সভাপতি ডাক্তার আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। আমিয়ান গ্রামের ডাঃ স্বপন ঘোষ, জাফরপুরের শফিউল ইসলাম, তারালীর কার্তিক সরকার ও থালনা গ্রামের বিশ্বনাথ সরকার জানান, ২০০৯ সালে একই প্রশিক্ষণ নিলেও তাদেরকে ভয় ভীতি দেখিয়ে এ প্রশিক্ষণে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা করে প্রশিক্ষণ ফি আদায় করা হয়েছে। এছাড়া গ্রাম ডাক্তার প্রশিক্ষণ সহায়িকা পত্রটি ৪০০ টাকা করে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদরের ভাদড়ার ডাঃ মঞ্জুরুল ইসলাম ও কদমতলার ডাঃ লাভু বলেন, তারা প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ডাঃ মামুন ও কদমতলার মিজানুর রহমান লাভলুর মাধ্যমে মাথাপিছু সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তবে অনেকেই সব টাকা একসাথে পরিশোধ করেননি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি তিনটি উপজেলার ৪৭০জন গ্রাম ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ফি ও ডাক্তারদের সহায়িকা বাবদ কম/বেশি ৩২ লাখ টাকা তুলেছেন। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রশিক্ষক ডাক্তারদের দেওয়া হচ্ছে দেড় লাখ টাকার মত। বিদ্যুৎ বিল বা অন্যান্য খরচ বাবদ খরচ হতে পারে ৫০ হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় দুর্বল ডাক্তারদের তাহলে ৩০ লাখ টাকা কার পকেটে গেলো ?
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জের আরএমপি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নেতা ডাঃ মিলন কুমার ঘোষ বলেন, তারা প্রশিক্ষণের জন্য কাউকে হুমকি দেননি। তবে প্রশিক্ষণ ফি ও গ্রাম ডাক্তার সহায়িকা বাবদ তারা যে টাকা তুলেছেন সেটা তাদের সংগঠণের মহাসচিব আমিনুল ইসলামের নির্দেশে।
তবে, আরএমপি সোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে কয়েকজন প্রশিক্ষনার্থী এ ব্যাপারে ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জানাতেই তিনি বলেন বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহাবুবর রহমান, কলারোয়ার ডাঃ জিয়াউর রহমান ও কালিগঞ্জের ডাঃ তৈয়বুর রহমান বলেন, তারা সিভিল সার্জনের আদেশ বাস্তবায়ন করছেন মাত্র। সেক্ষত্রে একজন প্রশিক্ষক ডাক্তার এক দিনের দু’টি সেশনের প্রশিক্ষণ বাবদ দেড় হাজার করে টাকা পাবেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়েত বলেন, আয়োজক প্রতিষ্ঠান আরএমপি সোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মহাপরিচালক আমিনুল ইসলাম তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষণের যাবতীয় বাজেট প্রণয়ণ করার কথা থাকলেও তারা প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে কি হারে টাকা নেবেন তা আলোচনা করেননি। এ ব্যাপারে সরকারের সুনিদ্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে অনিয়ম ও দূর্ণীতি চলতে থাকবে। তবে অনিয়মের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আরো জানান।