স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন:নিখোঁজ দুই সন্তানের সন্ধান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিনিধি
সাতক্ষীরায় স্ত্রীর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন পূর্বক নিখোঁজ দুই সন্তানের সন্ধান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগি। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের মৃত শেখ আলী আহম্মদ এর ছেলে শেখ আবু হেলাল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৮সালের ১৪ জানুয়ারী তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার দাদপুর গ্রামের শেখ শামিম হোসেনের দ্বিতীয় মেয়ে মোছাঃ শিউলী সুলতানা মেরিনাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলাম। দাম্পত্য জীবনে আমাদের ঈশান (১১), জিসান (৯) ও মেহজাবিন নিশি (৩) নামের তিনটি সন্তান রয়েছে। পারিবারিক অশান্তির করানে বরাবরের মত গত ২৭ জুন আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে ২৮ জুন শশুর ও শাশুড়ি এসে ঘটাকরে স্ত্রী এবং মেয়ে নিশিকে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়। চারদিন পর ২ জুলাই হঠাৎ আমার শাশুড়ি মাহমুদা মোবাইল করে জানায় যে মেরিনার অবস্থা খুবই খারাপ। সাথে সাথে দুই ছেলেকে নিয়ে সাতক্ষীরার শহরের হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি স্ত্রীকে দেখতে আসি।
কিন্তু আমাকে ধারে কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না। শশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা তাকে ঘিরে রেখেছে। তরপরও আমি ওষুধপত্র টাকা পয়সা যা লাগে যোগাড় করে দিলাম। রাত ১২টার দিকে আমি শহরের সুলতানপুর বোনের বাড়িতে যাই। পরদিন ভোর পৌনে চারটার সময় খবর পাই মেরিনা’র অবস্থা গুরুতর, তাকে খুলনায় নিতে হবে। আমি আমার বোন ইরিনা খাতুন ও ভাগ্নে রাতুলকে নিয়ে সদর হাসপাতালের সামনে এসে দেখি তাকে এ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে। ওই সময় মেরিনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। কিন্তু কথা বলারও সুযোগ পাইনি আমি। তাকে খুলান হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে বিধায় আমি টাকা জোগাড় করতে বাড়ি চলে আসি। ছাগল বিক্রি করে ও ধার দেনা করে আমার শশুর ও শ্যালকের কাছে টাকা পাঠাই। তারা বলে সে সুস্থ আছে। কিন্তু পরদিন ৪ জুলাই খবর পেলাম আমার তিন সন্তানের জননী স্ত্রী চতুর্থবার অন্তঃস্বত্ত্বা এবং সে আর বেঁচে নেই। একই সাথে পুলিশ আমাকে স্ত্রী হত্যার দায়ে খুঁজছে।
শেখ আবু হেলাল বলেন, সেই থেকে আমার পলাতক জীবন শুরু। স্ত্রীকে মাটি দেয়ার আগে দূর থেকে অস্পষ্ট দেখলাম। এসময় কানাঘুষি শুনেছি , তার শরীরে নাকি অনেক কাটাকুটির দাগ রয়েছে। ময়না তদন্ত ছাড়াই পাটকেলঘাটা থানার দাদপুর গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থান থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে বাঁশবাগানে এক খানার পাশে তার দাফন করা হয়েছে। আমার ধারনা পাশবিক নির্যাতনের কারনে তার জীবনে এই করুন পরিনতি ঘটেছে। কোন প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে অথবা মোটা অংকের টাকার বিনিময় আমার শশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। সেখান থেকে আমার দুই সন্তান জিসান ও নিশি নিখোঁজ রয়েছে।
আমার আশংকা অভিনব নাটক সৃষ্টি করে তারা আমাকে দৌড়ের ওপর রেখেছে। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন যদি আমার স্ত্রীর লাশ কবর থেকে তুলে ময়না তদন্ত করে তাহলে তার মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। ঘটনাটি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করলে অজ্ঞাত কারনে আমার আইডি বন্ধ হয়ে যায়। আমার স্ত্রীর জীবদ্দশায় আমার ওপর হামলার ঘটনায় চারজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। বর্ণিত মামলার আসামীরা আমার স্ত্রী হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে। তিনি স্ত্রীর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন পূর্বক নিখোঁজ দুই সন্তানের সন্ধান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।