ফেইসবুকে ভাইরালের পর বেনাপোল পৌরসভার সড়কের নিম্নমানের খোয়া অপসারণ

সাগর হোসেন,বেনাপোল:

সারাদেশের সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে সরকার যখন বিব্রত, ঠিক সেই সময় নিম্নমানের খোয়া দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছিল যশোরের বেনাপোল পৌরসভার নামাজ গ্রাম-সাদিপুর সংযোগ সড়কের সংস্কার কাজ। কাজের মান ভালো না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তারা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।শনিবার ২১শে আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সড়কটির নির্মাণকাজের  নিম্নমানের খোয়া দেওয়ার ছবি ভাইরাল হলে পরেরদিন রবিবার ২২শে আগষ্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৪২ ট্রলি খোয়া উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশ করা না শর্তে একজন গ্রামবাসী অভিযোগ তার রেকর্ড সম্পত্তি দখল করে সড়ক নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন মন্টুকে কে অবহিত করার পরও তিনি কোনো সমাধান করেন নাই। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন কার কাছে তাহলে আমি অভিযোগ দিব।

সরেজমিনে নামাজগ্রাম- সাদীপুর সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য বেনাপোল পৌরসভার দরপত্র আহবান করে। দরপত্রে অংশ নিয়ে আনুমানিক ২ কোটি  ২০ লাখ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে কাজটি পায় নিশীত বসু নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই বছরের শুরু হওয়া সড়কটির নির্মান কাজের মেয়াদ কাল ১ বছর।

বেনাপোল পৌরসভার গাজীপুর মোড় থেকে নামাজ গ্রাম হয়ে সাদিপুর বেলতলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের ইটের ডাস্ট খোয়া সংস্কার শুরু করে। নিম্নমানের খোয়া দিয়ে সংস্কার কাজ দেখে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাক্ষাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এলাকাবাসী বলেন, দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল অফিস-আদালত ও বাজারে যেতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। বেনাপোল পৌরসভা সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করায় এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, পিচ ঢালাইয়ের আগে পুরো সড়কটি জুড়ে ডাস্ট ইটের খোয়া বিছানো হয়। এতে সড়কটির মজবুত নির্মাণ কাজ নিয়ে আমরা সন্দিহান আছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত থাকা শ্রমিকদের অনেকবার বলার পরেও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেন নাই। অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ডাস্ট ইটের খোয়ার ছবি প্রকাশ করলে কর্তৃপক্ষ টনক নড়ে। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পরের দিন থেকে ডাস্ট ইটের খোয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে নিতে শুরু করেন। তারা আরো বলেন, সরকার সারাদেশের সড়ক উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু পৌরসভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিশীত বসুর অসাধু কর্মকর্তা ও অধিক মুনাফালোভীদের যোগসাজশে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেনাপোল পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড গাজিপুর-নামাজ গ্রামের কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন মন্টুকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি আমাদেরকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি জানেন না, কত কার্য দিবসে কাজটি শেষ হবে তাও তিনি জানেন না, রাস্তাটি কত টাকা বাজেট সেটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলতে বলেন। তার এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিক ও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওয়ার্ডের বড় একটি  সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে অথচ ঐ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য সম্পর্কে অবগত নন, বিষয়টি নিয়ে সবার ভিতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে যে কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন মন্টু তথ্য জানেন না ,নাকি সাংবাদিকদের তথ্য দিতে চান না।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইদ হোসেন জানান, বেনাপোল পৌরসভার জরুরি সড়ক পনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় নামাজ গ্রাম- সাদিপুর সড়কের আনুমানিক ২৩৫০ মিটার ২.৩কিলোমিটার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আনুমানিক ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় এই কাজটি পেয়েছে। আগামী ১ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার করে রাস্তার উপরে মজবুত কার্পেটিং করা হবে।

নিম্নমানের খোয়া ও ডাস্ট খোয়া ব্যবহার প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, সড়কের পিচ ঢালাইয়ের পূর্বে আগে বালি দেয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু বালি দেয়ার কারণে সড়কের পিস বেশিদিন টেকসই হয় না ও এজন্য দুই নম্বর ইটের খোয়া দিয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ করতে হয়। এতে সড়কটির কোথাও উঁচু-নিচু থাকেনা। এখানে যদি এক নাম্বার ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয় তখন রোলার দিলেও ইট গুলো সমানভাবে বসানো যায় না, বিধায় সড়কটি মজবুত করার জন্য আমরা দুই নাম্বার ইটের আদলা দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করে থাকি। কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটি থেকে নরম ইটের খোয়া গুলো অপসারণ করা হয়। এখন আমরা সেখানে এক নাম্বার ইটের খোয়া দিয়ে কাজ শুরু করেছি। তিনি আরো বলেন বেনাপোল পৌরসভার বর্তমানে আনুমানিক দশ কোটি টাকার উপরে (প্যাকেজ )সড়ক ও ড্রেন নির্মানের  কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। অন্যান্য পৌরসভার চেয়ে বেনাপোল পৌরসভার কাজের মান অনেক উন্নত।

এ বিষয়ে বেনাপোল পৌরসভার নামাজ গ্রাম-সাদিপুর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিশীত বসুর স্বত্বাধিকারী নিশীত বসু বলেন আমি বিশেষ কাজে বেনাপোলে বাইরে অবস্থান করছি, কত কিলোমিটার সড়ক, কত কার্যদিবসের শেষ করতে হবে, বাজেট কত টাকা, এ সম্পর্কে আমার জানা নেই। আপনারা বেনাপোল পৌরসভার প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন। তার এরুপ বক্তব্য শুনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এত বড় বাজেটের সড়ক নির্মানের কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে পেয়েছে অথচ তিনি নিজেই এই সড়কের নির্মান কাজ সম্পর্কে কোন তথ্য জানেনা। বেনাপোল পৌরসভার অধিকাংশ ঠিকাদারি কাজ নিশীত বসু প্রতিষ্ঠান পেয়ে বা করে থাকে। জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বেনাপোল পৌরসভার উন্নয়নকাজ অন্য কোন প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে কেন পাই না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)