যৌন হেনস্থা ও প্রাণনাশের হুমকিপ্রাপ্ত নায়িকারা
বিনোদন ডেস্ক:
হেনস্থার সঙ্গে নারীদের নিত্যদিনের বাস। বাড়ি, কর্মস্থল, বাস ছাপিয়ে গত কয়েক বছরে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম নারীদের ত্রাসের তালিকায় নতুন সংযোজন। নারী সেলেব্রিটির প্রতি আক্রোশ মেটানোর সবচেয়ে সহজ পথ, তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া। বাংলাদেশের অভিনেত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়।
তবে জেদের বশে তাকে খুন বা ধর্ষণের হুমকি দেয়ার ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না। যদিও গত বছর শবনম ফারিয়া কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জের ধরে থানায় জিডি করেছিলেন। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেষ্ট। কিন্তু বলিউড কিংবা ভারতে এর প্রকোপ ভয়াবহ।
সম্প্রতি এই হেনস্থার শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী-পরিচালক পূজা ভাট। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ধর্ষণ ও খুনের লাগাতার হুমকি আসায় তিনি প্রোফাইল ‘প্রাইভেট’ করে দিয়েছেন। ভক্তদের জানিয়েছেন, তার আপডেট পেতে প্রোফাইলে ‘রিকোয়েস্ট’ পাঠাতে। অনেক দিন পরে বড় পর্দায় ফিরছেন পূজা, ‘সড়ক টু’র হাত ধরে। হেনস্থা শুধু তাকে নয়, আছে তার বোন আলিয়া, শাহিন ভাটও।
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শাহিন। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু এবং তার জেরে নেপোটিজম বিতর্কের কারণে নেটিজেনদের চক্ষুশূল ভাট পরিবারের কন্যারা।
এদিকে সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই ভার্চুয়াল কাঠগড়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের মৃত্যুর এক মাস পরে তিনি ইনস্টাগ্রামে হুমকি-চ্যাটের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন। মুম্বাই পুলিশের সাইবার শাখাকে ট্যাগ করে পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছিলেন রিয়া। দু’টি প্রোফাইল চিহ্নিত করেছিল মুম্বাই পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
অনলাইন নীতি-পুলিশি ও ট্রোলিংয়ের সঙ্গে ছোট-বড় সব মাপের সেলেব্রেটি কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের মতো হুমকি দিয়ে যখন কোনো সেলিব্রেটিকে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়, তখন আর হালকাভাবে নেয়ার জায়গা থাকে না। পূজা ও রিয়া এই ট্রেন্ডের সাম্প্রতিক উদাহরণমাত্র।
পর্দায় অবাধ শরীর প্রদর্শনের কারণে, ছবির কনটেন্ট প্রসঙ্গে বা কোনো বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে অভিনেত্রীদের হুমকির মুখে পড়া এক ধরনের। কিন্তু প্রশ্ন যখন ধর্ম বা রাজনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলি ঘিরে চলে, তখন এই আক্রমণ আরো বিভীষিকার আকার নেয়।
‘পদ্মাবত’ ছবি মুক্তির আগে রাজপুত ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে ধর্ষণ থেকে মুণ্ডচ্ছেদ কোনো হুমকি থেকে বাদ যাননি দীপিকা পাড়ুকোন। নির্দিষ্ট এক রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতা করায় প্রায়শই টুইটারে ধর্ষণের হুমকি পান স্বরা ভাস্কর। আবার কোনো পুরুষ সেলেব্রিটিকে ছোট করার জন্য তার বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়ে থাকে। মেয়ে আলিয়াকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার পরেই কিছু দিনের জন্য টুইটার অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করেছিলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ।
অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরাত জাহান যখনই কোনো হিন্দু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। পাশাপাশি ভার্চুয়ালিও চলতে থাকে হুমকি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খোলসা করতে না চাইলেও অভিনেত্রীর বক্তব্য, অনলাইনে যারা ধর্ষণ বা খুনের হুমকি দেয়, তারা বিকৃত মানসিকতার মানুষ। জীবনে কোনো রকম নেগেটিভিটিকে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়। অনলাইনে এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমি চিন্তিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমি বিভ্রান্ত হই না।
তর্কের খাতিরে, কোনো নারী সেলেব্রেটি যদি দোষী প্রমাণিতও হন, তবুও তাকে ভার্চুয়ালি হেনস্থা করার অধিকার কে দিয়েছে? স্পষ্টবক্তা হওয়ার জন্য অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকেও নানাভাবে অনলাইন হুমকির মুখে পড়তে হয়।
এই অন্যায়ের মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন সোনাক্ষী সিনহা। গত ১৪ অগস্ট মুম্বাইয়ের অপরাধ দমন শাখায় এক ব্যক্তির (যিনি ইনস্টাগ্রামে হুমকি দিয়েছিলেন) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সোনাক্ষী। ছয় দিন পরে ঔরঙ্গাবাদ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। অনলাইন হেনস্থার বিরুদ্ধে সোনাক্ষীর ক্যাম্পেন, অব বাস! সাইবার আইন মজবুত ও কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে আওয়াজ তুলছেন অভিনেত্রীরা।