পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে না
এ বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরীক্ষা নেয়া হবে না। ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে। এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। তাই এ বছর সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মতি দিয়েছেন। আজ সেটি আমাদের হাতে এসেছে।
জাকির হোসেন আরও বলেন, এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা নেয়া না হলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। তবে স্কুল খোলা সম্ভব হলে পঞ্চম শ্রেণি ছাড়া অন্যান্য ক্লাসের পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলে গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।
সচিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) পাঠ্যক্রমের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে প্রস্তাব দিতে বলা হয়। তারা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর বিদ্যালয় খোলা হলে কতটুকু পড়ানো হবে সে বিষয়ে প্রস্তাব পাঠায়। যেহেতু সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না, তাই মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সভা করে পরবর্তী দুটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি প্রদান করা হবে না, তবে নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। আগামী বছর পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হলে আবারও বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ তৈরি করে। প্রস্তাবনায় বলা হয়, চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠদান দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। এ ছুটির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ টেলিভিশনে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু অনেকের শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং টেলিভিশন থাকলেও ক্যাবল সংযোগ না থাকায় সকল শিক্ষার্থীকে এ প্রোগ্রামের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এতে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মোবাইল ও রেডিওর মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বলা হয়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি পাঠ (নেপ) ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটির (বেডু) পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়গুলো খোলা না হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ দুই স্তরের অবশিষ্ট পাঠদান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
এদিকে স্কুল-কলেজে আরও ছুটি বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বর্তমান ছুটি শেষে এটি আরও বাড়ানো হতে পারে। নতুন করে আরও ১৫ দিন ছুটি বাড়ানো হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।