‘এলআরবি’র নামে কোনো কার্যক্রম চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ
বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ৯০ দশকের শুরুতে এলআরবি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি মারা যান। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ব্যান্ডটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে অন্য সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে। এমন অবস্থায় আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নামে কোনো কার্যক্রম না চালানোর জন্য আহ্বান করেছে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন শিল্পীর দুই সন্তান ফাইরুয সাফরা আইয়ুব ও আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব। সেখানে বলা হয়েছে, এখন থেকে আইয়ুব বাচ্চুর সকল সৃষ্টি ও এককভাবে তার রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশিত ২৭টি অ্যালবামের সৃষ্টিকর্ম ও পাশাপাশি ‘এলআরবি’ নামে কার্যক্রম চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ এমনটি করলে বাংলাদেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তাই এখন থেকে পরিবারের অনুমতি ছাড়া কার্যত কেউই ব্যান্ডটি নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। কারণ এলআরবির স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর আগে ২৩টি অ্যালবাম ও ব্যান্ড নিজের নামে নিবন্ধন করে গেছেন।
ফাইরুয সাফরা আইয়ুবও আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব বলেন, একজন শিল্পী এবং তার সংগীতের স্রষ্টা হিসাবে আমার বাবুই (বাবা) তার সৃষ্টিকর্মগুলো দীর্ঘকাল আগেই কপিরাইট করার জন্য উদ্যোগী ছিলেন। বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি তার গানের পুরো তালিকা কপিরাইট নিবন্ধিত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আইনিভাবে এগিয়ে যাওয়া এবং শিল্পীদের অধিকার এবং মালিকানা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রতি বাবুই সর্বদা লড়াই করেছেন।
তারা বলেন, বাবুইয়ের অকাল মৃত্যুতে আমরা পরিবার হিসেবে তার লক্ষ্য পূরণে অসম্পূর্ণ স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নানা প্রতিকূলতার পরও আমি এবং আমার ভাই এখন বাবুইয়ের অসমাপ্ত কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার অসম্পূর্ণ যাত্রাটি শেষ করা এবং কেউ যেন তার সৃষ্টিকর্মের মালিকানার অপব্যবহারের সুযোগ না পায় সেটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।
যোগ করে বলেন, এলআরবি নামে ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আমার বাবুই আইয়ুব বাচ্চু সম্পূর্ণ এককভাবে নিয়েছেন। তাই তিনি এককভাবে তার রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশিত ২৭টি অ্যালবামের সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট করার পাশাপাশি ‘এলআরবি’ নাম সম্বলিত লোগো এবং ব্যান্ডটিও তার নামে নিবন্ধিত করেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও তার রচিত, সুরারোপিত ও স্বকণ্ঠে পরিবেশিত আরো অসংখ্য গান রয়েছে, যেগুলো কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন। তার অকাল মৃত্যুর পর সন্তান হিসেবে আমরা তার বৈধ স্বত্বাধিকারী।
তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছি যে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ না করেই তার রচিত, সুরারোপিত ও নিজ কণ্ঠে পরিবেশিত গানগুলো কোন স্ট্যান্ডার্ড বজায় না রেখে যেনতেনভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে গাইছেন, এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করছেন। যা বাংলাদেশ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য।
অনুমতি ব্যতিত এলআরবি গানগুলো পরিবেশন থেকে বিরত অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য বাবুইয়ের সৃষ্টিকর্মের আইনি মালিকানার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়া। তাই এখন থেকে আমাদের সম্মতি ব্যতিরেকে এলআরবি নামের অপব্যবহার করে আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট ও রেজিস্টিকৃত গানগুলো পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন ও দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফাইরুয সাফরা আইয়ুবও আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুবের দাবি, তাদের বাবা সর্বদা বিশ্বাস করতেন যে তার ভক্তরা তার অক্সিজেন এবং তাদের কারণে তিনি বেঁচে ছিলেন, বেঁচে থাকবেন। তার সন্তান হিসেবে ভক্তদের তারা আশ্বস্ত করছেন, তাদের বাবার সৃষ্টির মাধ্যমে ভক্তদের কাছে যেভাবে ছিলেন সেভাবেই যেন থাকেন তা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের কাছে দুই সন্তানের একটাই চাওয়া, এই মুহূর্তে তার সৃষ্টিকর্মের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটু সময় প্রয়োজন। সেজন্য ভক্তরা যেন ধৈর্য্য ধরে তাদের সঙ্গে থাকেন।
শিল্পীর এই দুই সন্তান বলেন, আমরা বাবা হারিয়েছি, কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে আপনারা কোনোদিন হারাবেন না। তিনি আপনাদেরই থাকবেন অনন্তকাল। এক জন্মহীন নক্ষত্র হয়ে।
এদিকে সন্তানদের এই উদ্যোগের বিষয়টিতে সমর্থন জানিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী চন্দনা বলেন, সন্তানরা বড় হয়েছে। দুজনই পূর্ণ বয়স্ক। তারা তাদের বাবার যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা তাদের বাবার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও সংরক্ষণ করতে চায়। এজন্য তাদের উদ্যোগকে আমিও সাধুবাদ জানাই।
এমন উদ্যোগে এলআরবি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদুল হাসান স্বপন জানান, যদি পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, ব্যান্ডের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে- এতে আমার কিছু বলার নেই। তারা যদি মনে করেন, সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শেষ কথা, বসের অসম্মান হয়, এমন উদ্যোগ আমরা নেবো না। পরিবারের সম্মান মানে বসের সম্মান। তাই তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবো।
এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট নিয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্টার (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী জানান, বাচ্চু ভাই তার বেশিরভাগ গান ও ব্যান্ড কপিরাইট করে গেছেন। ফলে সেই গানগুলোর বাণিজ্যিক প্রচার বন্ধ করা বা রেভিনিউ সংগ্রহ করার বিষয়ে কোনো বাধা নেই। সেই রেভিনিউ বাচ্চু ছেলেমেয়েই পাবেন এবং আইন অনুযায়ী গান ও ব্যান্ডের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ এলআরবি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন মিল্টন আকবর, এসআই টুটুল ও সাইদুল হাসান স্বপন। এরমধ্যে মিল্টন আকবর আর এসআই টুটুল বহু আগে সরে যাওয়ায় আপাতত সাইদুল হাসান স্বপন দলটি পরিচালনা করছিলেন।