দেবহাটায় নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিয়ে বাজারজাত হচ্ছে চিকিৎসা সামগ্রী
সাতক্ষীরার দেবহাটায় আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরীতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং বিষাক্ত রাসায়নিকে ভিজিয়ে দেশব্যাপী বাজারজাত করা হচ্ছে চিকিৎসা সামগ্রী গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই দেবহাটার হাদিপুরে বিশাল ভবনে কয়েক তলা বিশিষ্ট এই ফ্যাক্টরীতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত এসব চিকিৎসা সামগ্রী দেশব্যাপী বাজারজাত করা হলেও, অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্যাক্টরী হিসেবে সেখানে কার্যক্রম চলতে থাকায় চিকিৎসা সামগ্রীর নামে প্রতিষ্ঠানটির মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার ঘটনা ধরা পড়েনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে।
আর সেই সুযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ কান কাগজপত্র এমনকি নুন্যতম ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই নোংরা পরিবেশে এবং বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করে কুলি থেকে কোটিপতি বনে গেছেন অনুমোদনহীন ওই ফ্যাক্টরীর মালিক নলতার কথিত আবু আহম্মেদ। নলতা এলাকায় মহাপ্রতারক সাহেদ করিমের মতো না হলেও, তিনি চিহ্নিত একজন প্রতারক হিসেবে পরিচিত।ফলে নলতা ও আশপাশের এলাকার মানুষের তার বাটপারি সম্পর্কে অদ্যপান্ত জানা থাকায়, নলতার পরিবর্তে কৌশলে দেবহাটার হাদিপুরে খুলে বসেছেন আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরী নামের চিকিৎসা সামগ্রী গজ, ব্যান্ডেজ তৈরীর ওই বাটপারি কারখানা। আর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকায় বাড়ী হওয়ায় নিজেকে তার আত্মীয় পরিচয় দিয়েও বাটপারি ও মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে নলতার আবু আহম্মেদ।জীবন রক্ষাকারী এসব চিকিৎসা সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহের নামে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি রাতারাতি বনে গেছেন কুলি থেকে কোটিপতি। হয়েছেন নলতা গজ ব্যান্ডেজ ব্যবসায়ী ও পাইকারী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি।বছরের পর বছর ধরে জনবসতিপূর্ন এলাকায় অবস্থিত ওই ফ্যাক্টরীর মুল গেইটে তালা লাগিয়ে তার অভ্যন্তরে চিকিৎসা সামগ্রী তৈরী ও সরবরাহের নামে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরীর এসকল অপকর্ম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হাদিপুরের ওই ফ্যাক্টরী থেকে বিভিন্ন রাসায়নিকের বিষক্রিয়া ও তীব্র দূর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি ও প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু আহম্মেদের থলের বিড়াল জনসম্মুখে বেরিয়ে আসতে থাকে।
সম্প্রতি এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে হাদিপুরের ওই আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরীতে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটির সীমাহীন দূর্নীতি, অনিয়ম এবং জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের নামে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিয়ে গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা বাজারজাত করনের নানান চিত্র।
ফ্যাক্টরীর মধ্যে ঢুকতেই প্রথমে সেখানে দেখা যায় সরকারী বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে যেসকল তুলা দিয়ে রোগীর ক্ষতস্থান পরিষ্কার ও গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয় সেগুলো ফ্যাক্টরীর অভ্যন্তরে একটি পুকুরের পানিতে ধুয়ে নিচ্ছেন নারী শ্রমিকেরা। যে পুকুরের সম্পূর্ন পানি তীব্র দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনায় সয়লাব। আর পানিতেই বসবাস অজস্র কোটি বহু প্রজাতির পোকা মাকড়ের।পাশেই রয়েছে কংক্রিটের তৈরী বিভিন্ন ধরনের কয়েকটি বিষাক্ত রাসায়নিকের পানি ভর্তি হাউজ। যেগুলোতে ওইসব রাসায়নিকে চুবিয়ে রাখা হয়েছে নোংরা ও পোকা মাকড়ে ভরা পুকুর থেকে ধৌত করা গজ ও ব্যান্ডেজ।মুলত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে বাজেয়াপ্ত কিংবা রোগীদের ব্যবহৃত ময়লা, আবর্জনা, প্রসাব, পায়খানা কিংবা পুজ ও শুকনো রক্তমাখা গজ ব্যান্ডেজ অতি অল্প মুল্যে কিনে সেগুলো ওইসব বিষাক্ত রাসায়নিকের দ্রবনে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভিজিয়ে রেখে চকচকে করে সেগুলোকে নতুন গজ ব্যান্ডেজ হিসেবে বাজারজাত করে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে নলতার প্রতারক আবু আহম্মেদের অনুমোদনহীন আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরী।
এসময় ওই ফ্যাক্টরীর মালিক নলতার প্রতারক আবু আহম্মেদকে সেখানে পাওয়া না গেলেও মোবাইলে তার ফ্যাক্টরীর কোন বৈধতা আছে কিনা এবং সেখানকার অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত চিকিৎসা সামগ্রী বাজারজাত করণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নোংরা পরিবেশে ও রাসায়নিকে মিশিয়ে গজ ব্যান্ডেজ তৈরী করলেও ডাক্তাররা সেগুলো ব্যবহারের সময় জীবানুমুক্ত করে নিবে। তাই এতে রোগীর কোন ক্ষতি হবেনা। অন্যদিকে ফ্যাক্টরীর বৈধতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন কিংবা বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।
নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত এধরনের গজ ব্যান্ডেজ রোগীর শরীরের ক্ষতস্থানে ব্যবহার করার ফলে কি হতে পারে জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. বিপ্লব মন্ডল জানান, যদিও সরকারি হাসপাতাল গুলোতে গজ ব্যান্ডেজ জীবানুমুক্ত করার একটি অপশন রয়েছে, কিন্তু সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এই ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে জীবানুযুক্ত কোন গজ ব্যান্ডেজ রোগীর শরীরের যেকোন ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে ইনফেকশনের তীব্র সম্ভাবনা থেকেই যায়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসা সামগ্রী বাজারজাতের নামে আহমেদ ব্র্যান্ড কটন ফ্যাক্টরীর এমন প্রতারণা ও চলমান অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, ইতোমধ্যেই ওই ফ্যাক্টরীর বিষয়ে খোজখবর নেয়া হচ্ছে। ফ্যাক্টরীটি যদি অনুমোদনহীন হয়ে থাকে এবং নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে চিকিৎসা সামগ্রী বাজারজাত করনের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করে থাকে তাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।