সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভারত থেকে আসা ২১টি অবৈধ গরু আটক
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভারতীয় অবৈধ ২১ গরু বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে আটক করতে বাধ্য হলো শ্যামনগর থানা পুলিশ। ঘটনা সূত্রে জানাগেছে যে, শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোলাখালী গ্রামে র্যাবের স্যালেন্ডারকৃত আসামী সিয়ামউদ্দীন গাজীর পুত্র জামির আলী জামুর নেতৃত্বে একদল পাচারকারী ট্রলারে করে গরুগুলো হরিনগর বাজারে স্লুইজ গেটে নিয়ে আসলে পুলিশের সোর্স নামে পরিচিত হরিনগর গ্রামের আক্কাজ আলীর পুত্র আলম সিদ্দিকির নেতৃত্বে কিছু লোক গরুগুলো আটক করে এবং শ্যামনগর থানা পুলিশকে অবগত করে।
২৬ জুলাই ২০২০ তারিখ রোববার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত পাচার হওয়া গরুর মালিক ধুমঘাট গ্রামের নাসির পাটোয়ারীর পুত্র র্যাবের স্যালান্ডারকৃত আসামী মিলন পাটোয়ারী ও চক্রের নেতৃত্বদানকারী জামির আলী জামু, আলমের সাথে ৬ লক্ষ টাকা দেনাদরবার করে।
বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পরে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করলে তার নির্দেশক্রমে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আলহাজ¦ নাজমুল হুদার নির্দেশে মুন্সীগঞ্জ বিট অফিসার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও এএসআই মাজহারুল ইসলাম মথুরাপুর গ্রামের মৃত মালেক ইসলাম গাজীর পুত্র নুরইসলামের বাড়ি থেকে ভারতীয় ১৯ পিছ অবৈধ গরু আটক করেন এবং একুই গ্রামের গনেশ চন্দ্র মন্ডলের পুত্র নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে ভারতীয় ২ পিছ অবৈধ গরু আটক করেন যার আনুমানিক মূল্য ১০ লক্ষাধিক টাকা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে জানাগেছে যে, গোলাখালী গ্রামের ছেয়ামউদ্দীন মোল্যার পুত্র মেকাইল ভারতে বসাবস করে। সেই সুবাদে তার আপন ভাই র্যাবের স্যালেন্ডারকৃত বনদস্যু জামির আলী ওরফে জামু এই অবৈধ গরু পাঁচার করে থাকে। জামু বাংলাদেশ থেকে বড় পাটি ধরে ভারতে তার ভাই মেকাইলের মাধ্যমে অবৈধ গরু ক্রয় করে এবং এই মেকাইল এই ক্রয় করা অবৈধ গরু ভারত থেকে সুন্দরবনের কচুখালী নামক স্থানে রেখে মোবাইল করলে জামু ও তাদের সঙ্গীরা সেখান থেকে অবৈধ গরুগুলো রাঁতের আধাঁরে পার করে থাকে। এই সব অবৈধ গরু রাঁতের আধাঁরে গোলাখালী বা মরগাং নামক স্থান দিয়ে পাশের্খালী কালভার্ট পার করে নাসির আলী ব্রীজ হয়ে বংশিপুর দিয়ে শ্যামনগরের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
এদিকে একটি অনলাইল সংবাদ মাধ্যমে দেখাগেছে যে, এবার ঈদুল আযহার সময়ে কোরবানির বাড়তি চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে গরু আনবে না সরকার। কয়েক দিন আগে শিল্প মন্ত্রণালয় অনলাইনে আয়োজিত চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন টাস্কফোসের দ্বিতীয় সভায় এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আনসার ও সীমান্ত) মো. সাহেদ আলী। তিনি বলেন, এবার দেশীয় খামারিরা যাতে গবাদিপশুর ভালো দাম পান, তা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু শ্যামনগর সীমান্তে পাচারকারী চক্র থেমে নেই। স্থলপথের নানান প্রতিকূলতা এড়াতে সংঘবদ্ধ পাচারকারীচক্র সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে অহরহ ভারতীয় গরু বাংলাদেশে পাচার করে নিয়ে আসছে। চলতি মাসের ৭ তারিখে অপর একটি অভিযানে শ্যামনগর থানা পুলিশ ৮ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ১৩টি ভারতীয় গরু সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে পাচার করে নিয়ে আসার সময় আটক করে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৪ পাচারকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দ্বায়ের করেছিলেন।
মুন্সীগঞ্জ বিট অফিসার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ভারতীয় অবৈধ গরুগুলো আটক করি। ২১ টি গরুর মধ্যে ১ টি গরু খুবই অসুস্থ সবগুলো পা ভাঙ্গা মনে হয় এই গরুটি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
নীলডুমুর-১৭, বিজিবি কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেঃ কমান্ডার মিল্টন কবির বলেন, ভারতীয় গরু পাচার বন্ধে সুন্দরবনে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।
শ্যামনগর থানার ওসি নাজমুল হুদা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে গরু পাচারের খবর গোপন সংবাদে জানতে পেরে পুলিশ দল অভিযান চালিয়ে গরুগুলি আটক করে।
এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছিলো।