অক্সফোর্ডের সফল ভ্যাকসিন তৈরি হলো যেভাবে

দীর্ঘ তিন মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। এর ফলে অনেকটা অবসান ঘটলো প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রতিক্ষার।

সোমবার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন তাদের শরীরে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কাজ করবে? কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে? কারা আগে পাবে? দাম কেমন পড়বে?  চলুন এ সর্ম্পকে বিস্তারিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেয়া যাক।

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন যেভাবে কাজ করবে

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯। অভুতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে টিকাটি। সে কারণে একটি মানুষের শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটতে দিবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাকেও রুখে দিতে পারবে।

করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে সেটার ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। সুতরং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং করোনাভাইরাসকে রুখে দেয়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (এন্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকেও অক্ষম করে দেয়া সম্ভব।

পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে এই টিকা। মূলত সব ধরনের টিকাই এন্টিবডি ও টি-সেলকে প্রভাবিত করে কাজ করে।

অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল কী?

করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে এখনো বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অ্যান্টিবডিতে। তবে এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ মাত্র। অ্যান্টিবডি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তৈরি করা ছোট আকারের প্রোটিন; যা ভাইরাসের সঙ্গে সেটে যায়। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

টি-সেল, রক্তের সাদা একটি অংশ আক্রান্ত কোষগুলোকে শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। প্রায় সব কার্যকর ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কাজ করে।

ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ১৪ দিন পর টি-সেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে অ্যান্টিবডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় ২৮ দিন পর। দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকে থাকতে পারে কিনা সেটি এখনও যাচাই করে দেখতে পারেননি গবেষকরা।

অক্সফোর্ড রিসার্চ গ্রুপের সদস্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, আজ যে ফল প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে আমরা আসলেই সন্তুষ্ট। আমরা নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল; দুটিই দেখতে পেয়েছি।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক ডোজ নেয়ার পর প্রায় ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মাত্র ১০ জনকে দুটি ডোজ দেয়া হয়েছিল এবং তাদের শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি বেশি তৈরি হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি কতটা নিরাপদ?

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেগুলো খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হয়েছিল।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, প্যারাসিটামল সেবনের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে তীব্র কোনো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি। এই ভ্যাকসিনটির আবিস্কারক প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, এখনো তাদের অনেক কাজ ও গবেষণা বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে পুরোপুরিভাবে ভ্যাকসিনটিকে প্রস্তুত করেই বাজারে ছাড়া হবে। তবে প্রাথমিক এই ফল বেশ আশাব্যাঞ্জক।

তিনি বলেন, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা বাড়ানো দরকার সেটি এখনো আমরা জানি না। গিলবার্ট বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা দরকার গবেষকদের। এছাড়া শেষ ধাপের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া দরকার; যা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

পরবর্তী পরীক্ষায় যা হবে

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক হলেও এর মূল উদ্দেশ্য সব মানুষকে দেয়াটা নিরাপদ কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া। ভ্যাকসিনটি মানুষজনকে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করবে নাকি তাদের কোভিড-১৯ উপসর্গ কমিয়ে দেবে; গবেষণায় তা জানা যায়নি।

কাদের প্রথম দেয়া হবে এই ভ্যাকসিন? 

প্রথম ধাপের ফল প্রকাশিত হলেও অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে ৪০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রয়োগ করা হবে। এই পরীক্ষা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। এর ফল পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ও ব্রাজিলে ৫ হাজার এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।

কখন পাওয়া যাবে?

চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই করোনার ভ্যাকসিন কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। তবে কার্যকর হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সহজলভ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বয়স এবং চিকিৎসা বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা স্বাস্থ্য ও সেবাকর্মীরা আগে পেতে পারেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হতে পারে।

কতোগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে?

যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি টিকার ১০০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার দিয়ে রেখেছে। নতুন বছরে হয়তো এটার উৎপাদনের সংখ্যা বিলিয়ন ডোজ ছাড়িয়ে যাবে।

দাম কতো পড়বে?

এখনো অবশ্য দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এটার এখনো অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে, ট্রায়াল বাকি রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। এসব কিছু ঠিকঠাকভাবে করার পরেই বাজারে ছাড়া হবে।

যেহেতু এই ভ্যাকসিন মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন, বৈশ্বিক চাহিদার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকছে, সুতরাং আশা করা যায় মানবিক দিক বিবেচনা করে এটার চড়া মূল্য হবে না। বিভিন্ন সময় এই টিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এমনই আশ্বাস দিয়ে আসতেছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

দীর্ঘ তিন মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। এর ফলে অনেকটা অবসান ঘটলো প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রতিক্ষার।

সোমবার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন তাদের শরীরে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কাজ করবে? কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে? কারা আগে পাবে? দাম কেমন পড়বে?  চলুন এ সর্ম্পকে বিস্তারিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেয়া যাক।

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন যেভাবে কাজ করবে

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯। অভুতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে টিকাটি। সে কারণে একটি মানুষের শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটতে দিবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাকেও রুখে দিতে পারবে।

করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে সেটার ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। সুতরং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং করোনাভাইরাসকে রুখে দেয়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (এন্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকেও অক্ষম করে দেয়া সম্ভব।

পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে এই টিকা। মূলত সব ধরনের টিকাই এন্টিবডি ও টি-সেলকে প্রভাবিত করে কাজ করে।

অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল কী?

করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে এখনো বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অ্যান্টিবডিতে। তবে এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ মাত্র। অ্যান্টিবডি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তৈরি করা ছোট আকারের প্রোটিন; যা ভাইরাসের সঙ্গে সেটে যায়। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

টি-সেল, রক্তের সাদা একটি অংশ আক্রান্ত কোষগুলোকে শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। প্রায় সব কার্যকর ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কাজ করে।

ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ১৪ দিন পর টি-সেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে অ্যান্টিবডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় ২৮ দিন পর। দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকে থাকতে পারে কিনা সেটি এখনও যাচাই করে দেখতে পারেননি গবেষকরা।

অক্সফোর্ড রিসার্চ গ্রুপের সদস্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, আজ যে ফল প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে আমরা আসলেই সন্তুষ্ট। আমরা নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল; দুটিই দেখতে পেয়েছি।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক ডোজ নেয়ার পর প্রায় ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মাত্র ১০ জনকে দুটি ডোজ দেয়া হয়েছিল এবং তাদের শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি বেশি তৈরি হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি কতটা নিরাপদ?

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেগুলো খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হয়েছিল।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, প্যারাসিটামল সেবনের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে তীব্র কোনো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি। এই ভ্যাকসিনটির আবিস্কারক প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, এখনো তাদের অনেক কাজ ও গবেষণা বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে পুরোপুরিভাবে ভ্যাকসিনটিকে প্রস্তুত করেই বাজারে ছাড়া হবে। তবে প্রাথমিক এই ফল বেশ আশাব্যাঞ্জক।

তিনি বলেন, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা বাড়ানো দরকার সেটি এখনো আমরা জানি না। গিলবার্ট বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা দরকার গবেষকদের। এছাড়া শেষ ধাপের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া দরকার; যা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

পরবর্তী পরীক্ষায় যা হবে

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক হলেও এর মূল উদ্দেশ্য সব মানুষকে দেয়াটা নিরাপদ কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া। ভ্যাকসিনটি মানুষজনকে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করবে নাকি তাদের কোভিড-১৯ উপসর্গ কমিয়ে দেবে; গবেষণায় তা জানা যায়নি।

কাদের প্রথম দেয়া হবে এই ভ্যাকসিন? 

প্রথম ধাপের ফল প্রকাশিত হলেও অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে ৪০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রয়োগ করা হবে। এই পরীক্ষা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। এর ফল পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ও ব্রাজিলে ৫ হাজার এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।

কখন পাওয়া যাবে?

চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই করোনার ভ্যাকসিন কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। তবে কার্যকর হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সহজলভ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বয়স এবং চিকিৎসা বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা স্বাস্থ্য ও সেবাকর্মীরা আগে পেতে পারেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হতে পারে।

কতোগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে?

যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি টিকার ১০০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার দিয়ে রেখেছে। নতুন বছরে হয়তো এটার উৎপাদনের সংখ্যা বিলিয়ন ডোজ ছাড়িয়ে যাবে।

দাম কতো পড়বে?

এখনো অবশ্য দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এটার এখনো অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে, ট্রায়াল বাকি রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। এসব কিছু ঠিকঠাকভাবে করার পরেই বাজারে ছাড়া হবে।

যেহেতু এই ভ্যাকসিন মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন, বৈশ্বিক চাহিদার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকছে, সুতরাং আশা করা যায় মানবিক দিক বিবেচনা করে এটার চড়া মূল্য হবে না। বিভিন্ন সময় এই টিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এমনই আশ্বাস দিয়ে আসতেছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)