গবেষণা:করোনা দ্রুত ছড়ালেও খুব বেশি অসুস্থ করছে না
করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে বলে একটি গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। তবে নতুন রূপান্তরিত ভাইরাসটি বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে পারলেও খুব বেশি অসুস্থ করে ফেলতে পারে না বলেও ওই গবেষণায় জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল এ তথ্য জানিয়েছেন।
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লা জোলার অধ্যাপক ও করোনাভাইরাস ইমিউনোথেরাপি কনসোর্টিয়ামের গবেষক এরিকা ওলম্যান স্যাফায়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ভাইরাসটির প্রধান ধরনটি এখন মানুষকে সংক্রমিত করছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সেলে প্রকাশিত এই গবেষণাটি পূর্ববতী কিছু কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যা চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রি-প্রিন্ট সার্ভারে প্রকাশ হয়েছিলো। গবেষকদের জেনেটিক সিকোয়েন্স সম্পর্কিত তথ্যে ভাইরাসটির একটি নির্দিষ্ট সংস্করণে রূপান্তরের ইঙ্গিত মিলেছে।
ওই গবেষক দল শুধুমাত্র জেনেটিক সিকোয়েন্সই পরীক্ষা করেনি বরংএটি নিয়ে তারা ল্যাবে মানুষ, প্রাণী এবং কোষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা যায় যে, ভাইরাসটির রূপান্তরিত সংস্করণটি আরো বেশি সাধারণ ও অন্যান্য সংস্করণের তুলনায় বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। ওলম্যান স্যাফায়ার বলেন, নতুন ভাইরাসটি নিজেকে অভিযোজিত করতে পারে।
ভাইরাসটির রূপান্তর স্পাইকটি প্রোটিনকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ এটি যে কাঠামো ব্যবহার করে সংক্রমিত কোষে প্রবেশ করে সেটিতে প্রভাব ফেলে। বর্তমানে গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন যে, ভাইরাসটিকে ভ্যাকসিন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা।
জানা গেছে, বর্তমান যেসব ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এসব ভ্যাকসিন ভাইরাসটির পুরনো স্ট্রেইন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরকে জি৬১৪ বলে আখ্যায়িত করেছেন গবেষকরা। তারা দেখিয়েছেন যে, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির ডি৬১৪ নামের প্রথম সংস্করণকে প্রায় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করেছে।
গবেষণায় লস অ্যালামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেত্তে করবের ও তার সহকর্মীরা প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, আমাদের বৈশ্বিক ট্র্যাকিং তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে যে স্পাইকে ডি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় জি৬১৪ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তারা আরো জানান, ভাইরাসটি আরো বেশি সংক্রামক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, তারা রোগটির তীব্রতার ক্ষেত্রে জি৬১৪-এর প্রভাবের প্রমাণ পাননি বলে উল্লেখ করেন তারা।
এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের মেডিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক লরেন্স ইয়ং বলেন, এটি একটি সুসংবাদ হতে পারে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এই গবেষণা বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের জি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টটি আরো বেশি সংক্রামক হতে পারে। তবে এটি ততবেশি প্যাথোজেনিক নয়। একটি আশা আছে যে, সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি কম প্যাথোজেনিক হতে পারে।
গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আক্রান্ত করোনা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। এর মাধ্যমে তারা করোনার ২টি ভ্যারিয়েন্টের তুলনা করে দেখেছেন। গবেষকরা বলেছেন, মার্চের শুরুর দিকে জি৬১৪ ভ্যারিয়েন্টটি ইউরোপের বাইরে বিরল ছিলো। তবে মার্চের শেষের দিকে বিশ্বজুড়েই এর ফ্রিকোয়েন্স বৃদ্ধি পায়।
সূত্র- সিএনএন