চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে বিপদে পড়েছে ভারত
বিকল্প ব্যবস্থা না করে আবেগে চীনা পণ্য বয়কটের উদ্যোগ নেয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ওষুধ ও ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম।
জি নিউজ’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, লাদাখে চীনের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর ভারতজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের দাবি উঠেছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতখানি সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই চীন থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীন থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় ব্যবসায়ীদের কাছে তার তালিকা চাওয়া হয়েছে।
সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীনা পণ্য নির্ভরতা কমাতে তৎপরতা শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারও। এদিকে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা তিনটি প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার। প্রকল্পগুলোর সমন্বিত ব্যয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপি।
মহারাষ্ট্রের শিল্পমন্ত্রী সুভাষ দেশাই জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে আর কোনো চুক্তি না করার নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে সেগুলো ভারতে উৎপাদিত হলে দাম কত দাঁড়ায়, উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর সংক্রান্ত কী কী অসুবিধা তাও শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সরকার মনে করছে, এর ফলে চীন থেকে নিুমানের বহু পণ্যের আমদানি কমানো যাবে। একইভাবে দেশে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণও বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিকেই আরও চাঙ্গা করবে।
কিন্তু সরকারের এই প্রাথমিক তৎপরতার মধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে বাজারে। এরইমধ্যে দেশটির ওষুধ শিল্প ও এর বাজার উত্তাল হয়ে উঠেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডে শতাধিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয় রয়েছে।
ভারত ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ৮০ শতাংশই আমদানি করে চীন থেকে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে তা কিনতে গেলে দ্বিগুণ দাম দিতে হয়। হরিদ্বারের এক ওষুধ উৎপাদক সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, চীন থেকেই ভারতে তৈরি বেশির ভাগ ওষুধের উপাদান জোগাড় করা হয়। এমনকি সাধারণ প্যারাসিটামল তৈরি করতে গেলেও চীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। তাই ভারতের জন্য চীনা পণ্য পুরোপুরি বয়কট এক প্রকার অসম্ভব।
ভারতের মোট আমদানির প্রায় ১৪ শতাংশ এখন চীনের দখলে রয়েছে। তার মধ্যে মোবাইল ফোন, টেলিকম, শক্তি ক্ষেত্র, প্লাস্টিকের খেলনা এবং ওষুধের কাঁচামালের জন্যই চিনের ওপরে বেশি নির্ভরশীল ভারত।
চীন থেকে যে পণ্য এবং কাঁচামাল বা সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়, সেগুলো নিয়ে শিল্পমহলের মতামত এবং পরামর্শ চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই তালিকায় রয়েছে হাত এবং দেয়াল ঘড়ি, ইনজেকশনের অ্যাম্পুল, কাচের রড এবং টিউব, হেয়ার ক্রিম, শ্যাম্পু, ফেস পাউডার, চোখ এবং ঠোঁটের মেক আপের জিনিস, প্রিন্টিং কালি, রং, তামাকজাত পণ্যের মতো জিনিসও। তাই সরকারি তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে চীনা আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে একাধিক ব্যবসায়ী সমিতি।
খেলনা, ফার্নিশিং ফ্যাব্রিক, টেক্সটাইল, বিল্ডার হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে ফুটওয়্যার, গার্মেন্টস, রান্নাঘরের জিনিস, লাগেজ, হ্যান্ড ব্যাগ, কসমেটিক্স, গিফট, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র, ঘড়ি, রত্ন ও গয়না, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পণ্য (হেলথ প্রোডাক্ট), মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, দিওয়ালি ও হোলির জিনিসসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের প্রায় তিন হাজার পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে ব্যবসায়িক সংগঠন ‘দ্য কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’ (সিএআইটি)।
লক্ষ্য, ২০২১ সালের মধ্যে এ ধরনের পণ্য সামগ্রীর ঘরোয়া উৎপাদনের পরিকাঠামো প্রস্তুত এবং আমদানি খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার অঙ্কটি ছেঁটে ফেলা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে চীন থেকে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে ভারত।
তবে বণিকসভার ‘চীন বর্জন’ পদক্ষেপের সঙ্গে মোদি সরকারের ‘আত্মনির্ভর’ প্রকল্পও যদি মিলিয়ে দেয়া যায়, তাহলেও মাত্র ৩০% চীনা পণ্যের আমদানি বন্ধ করা সম্ভব।