ধনী ও সরকারি চাকুরীজীবি শিক্ষিকা এবং এক গরীব ছেলের বন্ধুত্বের করুণ গল্প-জহর হাসান
দুজনের বাসা একই উপজেলাতে, কিন্তু দুজন দুজনাকে চিনতো না, তাদের পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। প্রতিদিনে হাই হ্যালো বলে কথা চলতো দুজনার মধ্যে তাদের সবকিছু শেয়ার করত কিন্তু দেখা করতো না কেউ কারো সাথে, এভাবে চলতে চলতে অনেক দিন পার হয়ে যায়। হঠাৎ করে ছেলেটি তার দেখার জন্য প্রস্তাব দিলে মেয়েটি তিন দিন আগে বললো যে, আমার স্কুলে খেলার অনুষ্ঠান আছে তুমি যদি সে অনুষ্ঠানে আসো তাহলে আমাকে দেখতে পাবে। ছেলেটি মেয়েটিকে দেখার প্রত্যাশায় সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। ছেলেটির কাছে রাত যেন কিছুতে কাটছে না। এমনিভাবে রাত শেষে ভোরের সূর্য নীল আকাশে দেখা দিল। গরীব ছেলেটির তেমন মানসম্মত পোশাক না থাকা সত্ত্বেও তার সব চেয়ে ভালো পোশাক পরে বাড়ি থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লো। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছেলেটি সেখানে উপস্থিত হয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করছে আর মনের কাগজে প্রেমের তুলি দিয়ে অনেক স্বপ্ন আকছে। প্রেমের রং তুলি দিয়ে স্বপ্ন বুনতে বুনতে ছেলেটি দেখলো সেখানে অনেক লোকের সমাগম হয়েছে কিন্তু তার মাঝে খুঁজে পাচ্ছে না সেই শিক্ষিকা কে। যোগাযোগ করার জন্য ছেলেটি মেয়েটিকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মেয়েটা ফোনটা রিসিভ করছে না। পাশে একটি ঝাল মুড়ির দোকানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকলো তবুও দেখা নাই। অনেক সময অপেক্ষা করার পর তাকে না পেয়ে বিষন্ন মন নিয়ে ছেলেটা বাড়ি চলে আসলো। আর অনুভব করল যে, এত লোকের মাঝে কে হবে এই মেয়েটা। ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে পৌঁছে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফোন দিয়ে মেয়েটি বলল কিরে তুমি কি এসেছো ? ছেলেটি বলল হ্যাঁ আমি এসেছি কিন্তু কোথায় তুমি আমি তো তোমাকে পেলাম না , অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো ফোন টা রিসিভ করলে না। মেয়েটি বললো কিছু মনে করো না আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। তুমি কোথায় ছিলে? ছেলে: পাশে যে দোকানটা ছিল ঐখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পারি নাই আসলে তুমি কোন জন কিছু মনে করো না তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে। এই ভাবে চলতে থাকে তাদের কথা। এদের মাঝে খুব ভাল একটা বন্ধুত্ব ছিল। ছেলেটা কে অনেক উপদেশ দিতো, কিভাবে চলবে কিভাবে খাবে সবকিছুই মনে হয় এদের জনম জনমের একটি বন্ধুত্ব। একদিন কথা না বললে খুব কষ্ট হতো ছেলেটার মেয়েটা যদি কথা না বলতো তাহলে ছেলেটা একা একা নিরবে চোখের পানি ফেলতো। হঠাৎ করে একদিন তাদের মাঝে দেখা হয় এবং পরিচয় হয় এভাবে চলতে থাকে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব। এক দিন যদি কথা না বলতো তাহলে ছেলেটা তার স্কুলে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে থাকতো এই ভাবে চলতে থাকে অনেক দিন ।প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার দিকে বাজারে অথবা নদীর পাড়ে ঘুরতে
আসতো দুই জন আর ছেলে টি বলতো
– আরেকটু থাকো না আমার সাথে।
– না গো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করলে বাসায় বকা শুনতে হবে।
– আরেকটু থাকো না, প্লিজ।
– নাহ…. চলো
কথাটা বলেই মেয়েটি হাত ধরে টান দিলো । গোমরা মুখ করে ছেলেটি একটু পিছু পিছু হাটতে শুরু করল। মেয়েকে পাগলের মত ভালোবাসে । এতই ভালোবাসতো যে, এক নজর দেখার জন্য ছেলেটা প্রতিদিন ১০ কি.মি. পথ পাড়ি দিতো, ২/৩ ঘন্টা বসে থাকতো। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতো মেয়েটি স্কুল শেষ করে এই রাস্তায় কখন আসবে? কখনো তার স্কুলের এর সামনে ২ মিনিট এর জন্য দেখা, কখনো বা স্কুলে থেকে বাসায় যাওয়ার পথে পিছু পিছু হাটা, কখনো বা তার বাসার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করা ।
এভাবেই চলতে থাকে তাদের দুজনের জীবন। অনেক সুন্দর হাসিখুশি ভাবে চলছিল তাদের বন্ধুত্ব। ছেলেটার মনে অনেক কষ্ট থাকে কিন্তু যখন মেয়েটি একটু বুঝিয়ে সুন্দর করে কথা বলে তখন সেই আনন্দে সারাটা দিন পার হয়ে যেতো। হঠাৎ এক কাল বৌশাখী ঝড় এসে সেই বন্ধুত্বের মাঝে সব কিছু ভেঙ্গে দিয়ে যায়।ছেলেটি সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অনেক বিপদে পড়ে যায়। ছেলেটির শুধু দু চোখে পানি ছাড়া আর কোন কিছুই নাই। ধনী শিক্ষিকার পরিবারের থেকে নানা ভাবে হুমকি এবং মামলা আসতে থাকে ছেলেটা উপরে, এমন কি পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার ও করা হয় ছেলেটাকে কিন্তু আল্লাহর রহমতে আবার মুক্তি পায় । তবুও শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেটি মেয়েটিকে ভুলতো না। মেয়েটাকে এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো রাস্তায় যে কখন মেয়েটি আসবে এই রাস্তায়, যে রাস্তা ঘিরে রয়েছে তাদের অনেক স্মৃত। ছেলেটি ভাবতো হয়তো আবার এক নজর দেখতে পাবো আগের মতো। এভাবে চলতে চলতে একটি বছর পার হয়ে যায়, মেয়েটি কথা বলেনা ছেলেদের সাথে। কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এখন শুধু দু চোখে পানি ঝরতে থাকে ছেলেটির । ছেলেটির অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ তবুও এখনো ভুলিনি সেই মেযেটিকে। এখনো সেই শিক্ষিকা কে দেখার জন্য ছেলেটা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে,,,,,,,
Please follow and like us: