সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন প্রেমিকা রিয়া
তদন্তে নয়া মোড়! বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে বৃহস্পতিবার প্রায় ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর পর পুলিশের হাতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। মুম্বাইয়ের পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রিয়া তার বয়ানে স্বীকার করেছেন, সুশান্তের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। তিনি আরো জানিয়েছেন, এ বছরের শেষের দিকে তাদের বিয়ের খবর, একেবারেই মিথ্যা নয়, সত্যি! সে জন্য চলছিল বাড়ি খোঁজাও। শুধু সম্পর্কেই নয়, লিভ-ইন রিলেশনে ছিলেন তারা।
লকডাউনের একটা দীর্ঘ সময় সুশান্তের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকছিলেন রিয়া-সুশান্ত। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুর দিন কয়েক আগে আচমকাই তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয় রিয়ার। রিয়া বেরিয়ে আসেন এবং আলাদা থাকতে শুরু করেন।
রিয়ার ফোন স্ক্যান করে পাওয়া গিয়েছে দু’জনের ব্যক্তিগত মুহূর্তের অসংখ্য ছবি, টেক্সট মেসেজ। মুম্বাই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝগড়া হওয়ার পরেও দু’জনের কথা হত। এমনকি মৃত্যুর আগের রাতে ঘুমোনোর আগে রিয়াকেই শেষবার ফোন করেছিলেন সুশান্ত। তবে রিয়ার বয়ানে বারে বারেই উঠে এসেছে সুশান্তের আচরণগত পরিবর্তনের কথা।
রিয়া পুলিশকে প্রমাণ দেখিয়েছেন, কীভাবে ব্যবহার বদলে যাচ্ছিল সুশান্তের। অবসাদ কাটানোর চিকিৎসাও চলছিল তার। রিয়া বার বার অনুরোধ করলেও ওষুধ খেতে চাইতেন না সুশান্ত। এর আগে একই কথা জানিয়েছিলেন রিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, লেখিকা সুহৃতা সেনগুপ্তও। তিনি বলেছিলেন, রিয়া এবং সুশান্তের দিদি অভিনেতাকে ওষুধ খাওয়ার জন্য অনুরোধ করে গেলেও, তা শোনেননি তিনি।
সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই সমানে উঠে আসছিল তার পর পর নতুন ছবি হাতে না থাকার প্রসঙ্গ। কিন্তু রিয়া বলেছে, অভিনেতার হাতে কাজ ছিল না, এমনটা নয়। সুশান্তের সঙ্গে তার নিজেরই অন্তত দু’টি ছবি করার কথা ছিল। যা শেষ হতে হতে লেগে যেত পরের বছর। খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে রিয়া এবং সুশান্তের যাবতীয় হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট, কলরেকর্ডও। গতকাল সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ সাদা পোশাকে, মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরে বান্দ্রা থানায় আসেন রিয়া। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত রিয়ার থানা থেকে বেরতে দেখতে সন্ধে গড়িয়ে যায়।
খুব শীঘ্রই মুম্বাই পুলিশ ডাক পাঠাতে চলেছে প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মসকে। খতিয়ে দেখা হবে সুশান্তের সঙ্গে তাদের চুক্তিপত্র, প্রতিভাবান তারকার অপমৃত্যুর পর যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। অতীত বলছে এক সাক্ষাৎকারে সুশান্ত জানিয়েছিলেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি চুক্তিবদ্ধ ছিলেন যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী তার ৩টি ছবি করার কথা ছিল এই ব্যানারের সঙ্গে। তার মধ্যে দু’টি ছবি ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ এবং ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ বাস্তবায়িত হলেও তৃতীয় ছবি ‘পানি’ আর করা হয়নি।
অথচ এই ছবিকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে ১১ মাস অভিনেতাকে অন্য ছবিতে সই করতে দেননি আদিত্য চোপড়া! আবার এই চুক্তির কারণেই দুটো বড় ছবি হাতছাড়া হয়েছিল সুশান্তের। যার মধ্যে একটি সঞ্জয় লীলা বানশালীর ‘রামলীলা’, অন্যটি ‘বেফিকরে’।
গত ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ। কিন্তু এই একটি মৃত্যুই যেন আচমকাই নাড়িয়ে দিয়েছে বলিউডের স্বজনপোষণ প্রথাকে। সামনে এনে রেখে দিয়েছে বেশ কিছু আড়ালে থেকে যাওয়া সত্যিকে।