হজে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ
রমজান মাসের শেষের দিকে সৌদি আরবে করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় অনেকেই হজ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় সৌদি আরবের সরকার হজ পালন করবে নাকি বাতিল করবে তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্র জানিয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, শেষ পর্যন্ত সৌদি সরকার হজ বাতিল করতে পারে। আবার কেউবা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে বিভিন্ন দেশকে হজ পালন করতে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সৌদি সরকার।
মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে এবার হজে অংশ নিচ্ছে না এশিয়ার চার দেশ-ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। ইতোমধ্যেই এ চার দেশ হজে অংশ না নেয়ার বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে।
তবে সৌদি সরকার সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালনের আয়োজন করলে বাংলাদেশ থেকে কত সংখ্যক হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পাবেন, স্বাস্থ্যবিধিসহ কী কী শর্ত দেয়া হবে, এসব শর্ত মেনে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পাঠানো হবে কি-না, নাকি বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছায় এবার হজযাত্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
আগামী দু-একদিনের মধ্যে হজের বিষয়ে চূড়ান্ত দিতে পারে সৌদি। তবে বাংলাদেশের সদ্যপ্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন, সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত জানার পর হজের বিষয়ে চূড়ান্ত নেবে সরকার।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনরত ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ থেকে সিংহভাগ হজযাত্রী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত বেসরকারি সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। তারা বলেন, সৌদি সরকারের অনুমতি পেলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এ বছর হজে হজযাত্রী পাঠাবে কি-না তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারপর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা। তবে তাদের কেউই এই মুহূর্তে নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই এ বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১ জিলকদ (২৩ জুন) থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, চলতি বছর হজে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে অনেক কিন্তু রয়ে গেছে। প্রথমত, সৌদি সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে হজের আয়োজন করবে কি-না, করলে কোন দেশ থেকে কত হজযাত্রী নেবে, কী কী শর্ত দেবে, নাকি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবারের হজ আয়োজন বাতিলের ঘোষণা দেবে, সেদিকে তাকিয়ে আছে গোটা মুসলিম বিশ্ব।
হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রমজান মাসের শেষের দিকে সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে থাকায় সৌদি সরকার হজের সামগ্রিক আয়োজনের বিষয়ে বেশ আশাবাদী ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তারা নতুন করে ভাবছেন। শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত আসে তা জানতে আগামী দু-একদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত সৌদি সরকার বাংলাদেশকে হজযাত্রী পাঠানোর অনুমতি প্রদান করলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এখনো পর্যন্ত সৌদি সরকার হজযাত্রীদের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর পর হজ ফ্লাইট, শর্ত মেনে সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে হবে। এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রী পাঠাবে কি-না, তা সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
হাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সৌদি সরকার অনুমতি প্রদান করলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠাবে কি-না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তার ধারণা, সৌদি সরকার শেষ পর্যন্ত এবারের হজ বাতিল করতে পারে। আর যদি সীমিত আকারে হজের আয়োজন করে, বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সৌদি সরকারের হজ বিষয়ে ঘোষণা পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হজে যাওয়ার কোটা এক লাখ ৩৭ হাজার। মোট হজযাত্রীর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার যাত্রীর হজ পালন করার কথা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত ঝুঁকির কারণে এবার সর্বসাকুল্যে হজযাত্রীর নিবন্ধন হয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জনের।