বাইরে করোনার ভয়, ঘরে থাকলে হালখাতার চাপ; দিশেহারা পাটকেলঘাটার মানুষ
সারাদেশের ন্যায় পাটকেলঘাটাবাসী যখন করোনা ভাইরাসের মধ্যে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছে ঠিক সেই মুহুর্তে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে হালখাতা। পরিবারের মুখে দু’মুঠো আহার জোটাতে যখন দুর্যোগের মধ্যে দুঃসাধ্য ব্যাপারে পরিনত হয়েছে তখনি পাটকেলঘাটা বাজারের বিভিন্ন দোকানীরা হালখাতা দিয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হালখাতাটা যেন করোনার ভয়াবহতা থেকেও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
অসহায় জনগন দিনাতিপাত করছে ত্রাণ আর সাহায্যের জন্য মানুষের দুয়ারে তখন পাটকেলঘাটার সকল দোকানীগণ মানুষের পকেট কেটে ঋণ পরিশোধ করতে অব্যাহত রেখেছে। ফলোশ্রুতিতে রক্ত বিক্রি করে হলেও দেনা পরিশোধের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবনযাপন করছে এ এলাকার জনগণ।
সরেজমিনে গত কয়েকদিন বিশেষত বুধ ও শনিবারে পাটকেলঘাটার সকল দোকানীদের হালখাতার কার্ড সরবরাহ ও অনুষ্ঠিত হতে দেখা মেলে। খোজ নিয়ে জানা যায়, এসকল ব্যবসায়ীদের হালখাতা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ক্রেতাদের অধিকাংশই অনুপস্থিত। ৪ ভাগের ১ ভাগ খরিদ্দার হালখাতায় অংশগ্রহণ করলেও বেশিরভাগই দায়সারাভাগে হালখাতায় অংশ নিচ্ছেন। কারণ জানতে কয়েকজন খরিদ্দারের নিকট সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করা হয়। প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, হালখাতা করব কোথা থেকে! যেখানে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে হাতে একটি টাকা নেই আর সেই মুহুর্তে হালখাতার চাপ এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে। আয়ের জন্য বাইরে বের হলে করোনার ভয়, ঘরে থাকলে হালখাতার চাপ বিধায় মরণ ছাড়া কোনো গতি খুজে পাচ্ছি না। তাদের ভাষ্য এমনই, খেয়ে বসেছি দেনা করে তো অবশ্যই পরিশোধ করব কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যে নুন আনতে তো পান্তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। কোনদিন দু’বেলা আবার কোনোদিন না খেয়েও বাচ্চাদের নিয়ে জীবন যাপন করছি। রক্ত বিক্রি করেও এ দেনা পরিশোধ হবে না। পাটকেলঘাটার কুমিরা গ্রামের আব্দুস সালামের পুত্র শহিদুল ইসলাম জানান, হালখাতা হালখাতা আর হালখাতা। কাপড়ের দোকান, মুদি দোকান সহ ১৫ দোকান থেকে কার্ড পাওয়ায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে আছি। যদি হালখাতার টাকা পরিশোধ করতে না পারি তবে বেধে রাখবে বলে অনেকে আমন্ত্রণের সাথে হুমকি দিয়ে গেছে। একেতো করোনা ভাইরাস তার উপর ঘুর্নিঝড় আম্পান আর অতি বৃষ্টি এ যেন এক দুর্যোগের বছর। অন্যান্য বছর ধান পাট এবং সমিতি হতে ঋণ নিয়ে হালখাতার দেনা পরিশোধ করি। কিন্তু ঘুর্নিঝড় আম্পানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় নিজের খাওয়ার মতো কোনো চাউল নাই। পানের বরজ ঝড়ে পড়ে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। সরুলিয়া ইউনিয়নের আজাদ হোসেন জানান, বাড়ি-ঘর ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ায় আরও ঋণ করে তা মেরামত করলাম। মাথা গোজার একটু ঠাঁই তো দরকার। আরও জানা যায়, অন্যান্য বছর স্থানীয় সমিতি হতে ঋণ নিয়ে তারা হালখাতার টাকা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু এ দুর্যোগের ভেতর এনজিও সমিতিগুলো তাদের ঋন দিতে অপারকতা প্রকাশ করেছে। আবার ঋণের টাকা ঠিকই নিতে প্রতিদিন দ্বারে দ্বারে ধন্যা দিচ্ছে। উপায়ন্তর না দেখে অনেকে ঋণের টাকা দিতে অব্যাহত রেখেছে। সবকিছু মিলে পাটকেলঘাটাবাসী মহামারি দুর্যোগ সমিতি আর হালখাতা নিয়ে কঠিন কষ্টে জীবন যাপন করছে। তাই এ অ লের মানুষের প্রাণের দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদ্বয় যদি হালখাতা আর ঋণের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় তবে এই মুহুর্তে প্রাণে বাচতে সক্ষম হবে।