অনটাইম গ্লাস করোনার মধ্যে ডেঙ্গু মহামারি ডেকে আনতে পারে
করোনার মধ্যে অনটাইম গ্লাসে ডেঙ্গুর মহামারি ডেকে আনার সম্ভবনা বিরাজ করছে। এতে প্রাণহানী ঘটার পাশাপাশি সামাজিক ভাবে ব্যাপক প্রভাব প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান বহুল আলোচিত করোনা ভাইরাসে গোটা পৃথিবীর মানুষের মুখের হাসি কেঁড়ে নিয়েছে। এতে অনেকে কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি মানবেতর জীবন যাপন করছে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য। বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত এর ঔষধ অবিস্কার করা যায়নি। তবে বাহিরের দেশ থেকে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রভাবে মৃত্যুরহার অনেক কম। যা বাংলার মানুষের একটি আশার বানী। তাই বলে এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা যে কম তা নয়।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত ১২জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য মতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন ৪৬ জন। সব মিলে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। সব মিলে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৫২৩ জনের। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯৫ জনের। নতুন মৃত্যু হওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। সর্বমোট ১৭ হাজার ২৫০ জন সুস্থ হয়েছেন। দেশে ৫৯টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর এতে করে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি যাতে মেনে চলে তার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতও চালু রয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যে মানুষ সামাজিক দূরত্বের কথা মানছে না। পাশাপাশি তাদের কর্মক্ষেত্রে এবং দৈনন্দিন কাজে অনেকেই মাস্ক ব্যাবহার করছে না। যেটি সংক্রামণ ছড়ানোর একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কালে পেশাগত কাজের করতে যেয়ে সমাজের বহু বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যার মধ্যে একজন সংবাদকর্মী হিসাবে কাজ করতে যেয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ কৃষি সহ অন্যান্য কাজের সাথে জড়িত হওয়ায় সমাজের বিষয় সম্পর্কে বেশি অসেচেতন। জানলেও মানেন না অনেকেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের দারিদ্রতা অধিকাংশদেরকে বাধ্য করছে ঘর থেকে বের হতে। যা তাদের মৃত্যুর ভয়কে হার মানিয়েছে। কিন্তু কাজ শেষে বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও একটি সংখ্যক মানুষ অযাথা চায়ের দোকান, বাজার, রাস্তায় অকাজে সময় নষ্ট করছে। এতে করে তাদের সামজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি একে বারে নেই বললেও চলে। আর হাট-বাজার গুলোতে ৮০% মানুষ মাস্ক ছাড়া কেনাকাটা করছে। এসব না হয় বাদ দেওয়া যাক। দেশব্যাপী শুরু হওয়া লকডাউনের সময় বন্ধ হয়ে যায় সবধরণের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এতে করে মফস্বল এলাকার সংসদ নামক খ্যাত চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল করে দেওয়া হয়। আর এতে খুলে যায় সকল চায়ের দোকান। সংক্রামণ এড়াতে এসব দোকান ও হোটেলে অনটাইম গ্লাস ও প্লেটের ব্যবহারের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। সেই সুত্র ধরে শতকারা ৯৫% প্রতিষ্ঠান অনটাইমের জিনিষপত্র ব্যবহার করছে। কিন্তু এই অনটাইম প্লেট, গ্লাস ব্যবহার ভালো উদ্দেশ্য ব্যবহার করার কথা বলা হলেও এর অবশিষ্ট বর্জ্য কি হবে সেটা ভাবা হয়নি। যার কারণে প্রায় সব দোকানিরা এ গুলো ব্যবহারের পর যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছেন। অবার অনেকে এগুলো পুড়িয়ে বিনষ্ট করছেন। আর এতে পরিবেশের বিপর্যয় হওয়ার পাশাপাশি এর থেকে ছড়াতে পারে নতুন কোন রোগ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন প্রকার অনটাইন গ্লাস ও প্লেট পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে প্লাস্টিকের তৈরী অনটাইমে ডেকে আনতে পারে ডেঙ্গুর মহামারি। কারন চলতি বর্ষায় ফেলে রাখা অনটাইমের প্লাসে স্বচ্ছ পানি জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে সহজে এডিস মশার জন্ম নিতে সহায়তা করবে। চলমান করোনার মধ্যে নতুন করে ডেকে আনা ডেঙ্গুতে যাতে প্রাণহানীর মহামারি ধারণ করতে না পারে সে ব্যাপারে এখনই সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে ছোট্ট ভুলে দেশকে আরো পিছিয়ে দেবে। তাই সময় এসেছে এখনই সোচ্চার হওয়ার। অনটাইম ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানে ঝুঁড়ি বা ডাস্টবিন স্থাপন করে এক জায়গাতে এগুলো রেখে বিনষ্ট করা হলে বা পানি জমতে না দিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে। ছোট বড় হাটবাজারগুলোর বেশিরভাগ ডাস্টবিন নষ্ট বা অকেজো।
আগামী বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এগুলো পরিস্কার করে ফেলতে হবে এবং অযথা পানি জমতে না পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষ, ইজারাদার ও কমিটির সদস্যদের নিয়মিত তদারকি জরুরী। বেশি বেশি প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বাজেটের একটি অংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সঠিক ভাবে ব্যায় করতে হবে। মৌসুমী সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বন্ধ ড্রেন গুলো খুলে দিয়ে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। দখল হওয়া খালগুলো উচ্ছেদ করে জলাবদ্ধতা দুর করা না গেলে বর্ষার মৌসুমের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে দেশকে খাদ্যের ঘাট্টির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সব মিলে করোনা ও ডেঙ্গু মুক্ত সমাজ উপহার পেতে সচেতনতার পাশাপাশি সকলের সহযোগীতার বিকল্প নেই।