কালিগঞ্জে গুড় ব্যবসায়ীর শিক্ষাক্ষেত্রে ১৮ বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামের শেখ আব্দুল কুদ্দুছ। বয়স ৫৫ বছর, এ পর্যন্ত তিনি ১৮টি বিষয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদ লাভ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

১৯৬৫ সালে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শেখ আব্দুল কুদ্দুছ। পিতা মৃত আলহাজ্ব শেখ সামছুর রহমান ও মা অলেদা খাতুন। ছোটবেলায় পড়ালেখার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না কুদ্দুছের। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। সেই আগ্রহ থেকেই এ পর্যন্ত ১৮ টি বিষয়ে স্নাতক বা সমমান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শেখ আব্দুল কুদ্দুছ ১২বছর ধরে কর্মরত আছেন স্থানীয় কাশিবাটি মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে। এর আগে ৪ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন শ্রীকলা মহিলা দাখিল মাদ্রাসায়। স্থানীয় দুইটি মাদ্রাসায় (এমপিও ভুক্ত নয়) ১৬ বছর সুপার পদে দায়িত্ব পালনের পরও এলাকায় শেখ আব্দুল কুদ্দুছের পরিচয় ভিন্ন।

এলাকায় তাকে ‘গুড়ে কুদ্দুছ’ নামে সবাই চেনেন। কারণ অবসরে তিনি হাটে হাটে গুড় বিক্রি করেন। সেই গুড় বিক্রির টাকা দিয়েই চলে নিজের পড়ালেখাসহ সংসার খরচ। কুদ্দুছ জানান, “যে দুটি মাদ্রাসায় ১৬ বছর সুপার পদে দায়িত্ব পালন করছেন তার একটিও এমপিওভুক্ত নয়। তাই বেতনও তেমন একটা পান না। যেহেতু তাহার নিজের সংসার আছে, ছেলে পড়ালেখা করে, সে নিজেও পড়ালেখা করে, তাই একটু বাড়তি আয় দরকার।” এ ছাড়া অবসরে তিনি আরও একটি কাজ করেন। এলাকায় ছেলেমেয়েদের মাস্টার্স পাস করায় উদ্বুদ্ধ করেন আর বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সাজেশন দিয়ে সাহায্য করেন।

উল্লেখ্য, শেখ আব্দুল কুদ্দুছ এক সন্তানের জনক। তার ছেলে বর্তমানে এইচ.এস.সি পাশ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতগুলো বিষয়ে পাশের রহস্য জানতে চাইলে কুদ্দুছ জানান, “একপ্রকার জেদের বসে আমি এতগুলো বিষয়ে পাশ করেছি। আমি যখন ১৯৮২ সালে গোলাপদিয়া হাইস্কুল (বর্তমানে নেই) থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেই তখন আমার সাথে পড়া এক মেয়ে একটা কারণে আমাকে সবার সমানে অশিক্ষিত, ছোটলোক মূর্খ বলে অপমান করেছিল। সেদিন সবার সামনে অশিক্ষিত ও মূর্খ বলায় খুব জেদ হয়েছিল শিক্ষিত হওয়ার। সেই জেদের কারণে নতুনভাবে পড়ালেখা শুরু করি। আমার সেই নতুনভাবে শুরু করা পড়ালেখা এখনো চলছে। থামতে ইচ্ছে হয়নি, কারণ আমি তখন থেকেই পড়ালেখার মধ্যে মজাটা খুঁজে পেয়েছিলাম। আর সেই মজার কারণেই আমি এতগুলো বিষয়ে পাস করেছি।”অবসর পেলেই হাটে গুড় বিক্রি করেন কুদ্দুছ। কতদিন চালিয়ে যেতে চান নিজের পড়ালেখা এমন প্রশ্নে কুদ্দুছ বলেন, “আমি এখন সরকারি বিএল কলেজ খুলনায় অর্থনীতিতে এমএসএস করার জন্য অধ্যয়নরত। অর্থনীতিতে পাস করার পর এত বছরের পড়ালেখার ইতি টানতে চাই। কারণ এখন আমার বয়স হয়েছে। সঠিকভাবে সব কিছু আর সেভাবে মনে রাখতে পারি না। তাছাড়া আমার ছেলে বড় হয়েছে। সব কিছু যদি ঠিক থাকে তবে এই অর্থনীতিতে হবে আমার শেষ পাশ।” একনজরে কুদ্দুছের ১৮বিষয়ে পাশের বিবরন উল্লেখ করা হলো। * ফাযিল, কেশবপুর বাহারুল উলুম মাদরাসা, যশোর (১৯৮৮) * কামিল (হাদিস), কেশবপুর বাহারুল উলুম মাদরাসা, যশোর (১৯৯০) * কামিল (ফিকাহ), সাতক্ষীরা আলিয়া মাদরাসা (১৯৯৪) * কামিল (তাফসির), শাহ আবাদ মাজিদিয়া আলিয়া মাদরাসা, নড়াইল (১৯৯৬)* কামিল (আদব), শাহ আবাদ মাজিদিয়া আলিয়া মাদরাসা, নড়াইল (১৯৯৯) * কামিল (মোজাব্বিদ), ঢাকা আলিয়া মাদরাসা (২০০১) * এমএ (আরবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, (সান্ধ্যকালীন) (১৯৯৫)* এমএ (সমাজবিজ্ঞান), রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর (১৯৯৭)* এমএ (ইসলাম শিক্ষা), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৩)* এমএ (ইসলামের ইতিহাস), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৫) * এমএ (ইতিহাস), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৪) * এমএ (দর্শন), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৬) * এমএ (সংস্কৃত), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৮) * এমএ (বাংলা), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০০৯) * এমএ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা (২০১২) * বিএড, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা (২০১০) * এমএড, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা (২০১৩) * এলএলবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮) বর্তমানে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ করছেন খুলনার সরকারি বিএল কলেজে। ১৯৮২ সালে বিষ্ণুপুরের গোলাপদিয়া হাইস্কুল (বর্তমানে নেই) থেকে এসএসসি পাসের পর ১৯৮৩ সালে দারুল উলুম চৌমুনী সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। আলিম পাস করেন ১৯৮৫ সালে গোমানতলি সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে। এরপর ১৯৮৮ সালে যশোরের কেশবপুর বাহারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ফাযিল পাস করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)