বেতন পরিশোধে চাপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে অসহায় অভিভাবকরা
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী এক মাসেও স্কুল-কলেজ খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই বন্ধের মধ্যেও রাজধানীর অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডেইলি বাংলাদেশের কাছে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, টিউশন ফি আদায়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নম্বর পাঠিয়ে চাপ প্রয়োগ করছে। অনেকে আবার ফোন করেও টাকা চাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণে অসহায় হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেতন আদায়ের জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নম্বর পাঠানোর পাশাপাশি কল দিয়েও টাকা দিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, মহামারীর এই সময়ে ব্যবসা গুটিয়ে বসে আছি। পুঁজি থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। এখন না পড়িয়েও যদি সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে হয়, তাহলে আমরা যাবো কোথায়? বিষয়টি নিয়ে সরকারকে জোরদার পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। মাহামারীর এই সময়ে নিয়মিত বেতন না দিলে তার সন্তানকে স্কুল থেকে বের করে দিতে পারে বা পরবর্তীতে তার রেজাল্ট খারাপ দেয়া হতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন এই অভিভাবক।
গোলাম সামদানী নামে আরেক অভিভাবক বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি কিন্তু মহামারীর এই সময়ে বেতন হচ্ছে না। জমানো টাকা খরচ খরছি। বাড়িওয়ালা ভাড়া অর্ধেক করে দিয়েছেন বলে কিছুটা ভালো আছি বলা যায়। তবে সন্তানের স্কুল থেকে বেতনের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। তারা সময়টা বুঝতে চাচ্ছে না। যখন তাদের উদরতা দেখানো কথা সেখানে তারা জুলুম করার চেষ্টা করছে।
এদিকে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ে চাপ না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না- এমন কারণ দেখিয়ে নির্দেশনা ঠিকমতো মানছেন না।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, আমি আমার শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই আমরা শিক্ষকদের বেতন প্রদান করি। এই সময়ে শিক্ষকদেরও টাকার প্রয়োজন আছে, তাদের সংসার আছে। আমরা কেন তাদের কথা ভুলে যাচ্ছি? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়াসহ আরো অনেক খরচ আছে, আমরা সেসব কোথা থেকে এনে দিবো?
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় পরিস্থিতি ভালো ভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবাইকে সবার সহযোগি হতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা দেশের জন্য কোন মঙ্গলজনক ফল বয়ে আনবে না।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এরমধ্যে সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৬২০টি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এসব স্কুলে মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে ২ কোটি। মাধ্যমিকে মোট প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৬৬০টি। এর মধ্যে সরকারি মাত্র ৬৭৫টি। বাকি ১৯ হাজার ৯৮৫টি বেসরকারি। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি। সরকারি ও বেসরকারি কলেজ আছে ৪ হাজার ৫৫১টি। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩ হাজার ৯০০টি। কলেজে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৪ লাখ। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৫টি। এর বাইরে কয়েক হাজার ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে সবাই একটি সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে অভিভাবকদের আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এজন্য টিউশন ফি আদায়ে চাপ না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক আচরণ করতে বলা হয়েছে। কেউ যদি এমন কোন আচরণ করে যেটি আমাদের দৃষ্টিতে অন্যায় তাদেরকে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনছি। তবে বিচারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিবেচনাবোধ। এটি ঠিক থাকলে কোন ঝামেলাই থাকে না।