শোলাকিয়ায় বদলে যাচ্ছে ২৭০ বছরের ইতিহাস
প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এবার খালি থাকছে ঈদের দিনেও। প্রায় ২৭০ বছরের ইতিহাসে এবার হচ্ছে না দেশের সবচেয়ে বড় এই ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত।
করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলার মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির সমাগম হয় বিধায় তাদের শারীরিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না
তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদগাহ কমিটির সভা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির সভাপতি হিসেবে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন ইমাম-উলামাদের সঙ্গে মিটিং করা হবে।
প্রতি বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ পড়েন। এখানে একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল প্রান্তরে সব মুসল্লিরা যাতে নামাজ শুরুর মুহূর্ত জানতে পারেন, এ জন্য নামাজ শুরুর আগে বেশ কয়েকবার বন্দুকের গুলি ছোড়া হয়। সব শেষ জামাত শুরুর এক মিনিট আগে গুলি ছুড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতির ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় নেয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা। দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার থেকে চলাচল করে দু’টি বিশেষ ট্রেন।
জানা গেছে, বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রভাবশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ করেন। তারও দুইশ’ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি এক সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’। যা বর্তমানে শোলাকিয়া নামে পরিচিত।