সুন্দরবনে ২২টি জীবিত হরিণসহ ৩ শিকারি আটক
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটাপন্ন লকডাউনের মধ্যে সুন্দরবনের হরিণ শিকারিচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সোমবার সকালে আটক হয়েছে স্মরণকালের বৃহত্তম ২২টি জীবিত হরিণের চালান। এ সময় ৩০ কেজি হরিণের মাংস, ৭০০ ফুট হরিণ ধরা নাইলনের দড়ির ফাঁদ, দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, একটি ডিঙি নৌকাসহ আটক হয়েছে তিন শিকারি। ফাঁদে আটকে রাখা জীবিত ২২টি হরিণ তাৎক্ষণিকভাবে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। জীবিত হরিণের বৃহত্তম এই চালান ধরা পড়ার পর বন বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
পুর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের টিয়ারচরে অভিযান চালিয়ে বৃহত্তম এই হরিণের চালান আটক করা হয়। শিকারিচক্রের তিন সদস্য, মাংস ও অন্যান্য মালামাল আজ মঙ্গলবার সকালে রেঞ্জ অফিসে আনার পর ওই শিকারিদের বিরুদ্ধে বন ও বন্যপ্রাণী আইনে মামলা দিয়ে দুপুরে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ নিয়ে গত এক মাসে ২২টি জীবিত হরিণ, ৩৯০০ ফুট হরিণ ধরা ফাঁদ, ৪০ কেজি মাংস, তিনটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, একটি ডিঙি নৌকা ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ শিকারিচক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পুর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনার সুযোগ নিয়ে শিকারিচক্র তৎপর হয়ে উঠলে সুন্দরবনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে ১০ এপ্রিল থেকে টহল জোরদার করা হয়। সাম্প্রতিককালে এতবড় জীবিত হরিণের চালান আটক হয়নি। বিষয়টি বন বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ জন্য বনের সকল ইউনিটকে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ মে শরণখোলা রেঞ্জের ডিমের চল থেকে ১৫০০ ফুট ফাঁদসহ দুই শিকারি, ২৩ এপ্রিল শরণখোলার সোনাতলা গ্রাম থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংস, ১৭ এপ্রিল চান্দেশ্বর থেকে ৭০০ ফুট ফাঁদ, ১০ এপ্রিল কচিখালী থেকে ৫০০ ফুট ফাঁদ এবং ২৮ মার্চ বনের চরখালী এলাকা থেকে ৫০০ ফুট হরিণ ধরা ফাঁদ উদ্ধার করা করা হয়।
পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, করোনার লকডাউনে মধ্যে সম্প্রতি হরিণ শিকারিচক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়। বন বিভাগের কোকিলমনি ও জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের দুটি দল গত তিন-চার দিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান চালায়। অভিযানের একপর্যায় সোমবার সকালে টিয়ারচর থেকে তিন শিকারিকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। এ সময় ওই শিকারিদের স্বীকারোক্তিমতে গহীন বনের ভেতর ফাঁদে আটকে রাখা ২২টি জীবিত চিত্রল হরিণ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ফাঁদ কেটে হরিণগুলো বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। ফাঁদের মধ্যে থেকে একটি হরিণর অর্ধেকটা বন্য শুকরে খেয়ে ফেলেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ৩০ কেজি হরিণের মাংস, সাত শ ফুট ফাঁদ, দুটি ট্রলার, একটি ডিঙি নৌকাসহ বিভিন্ন শিকারসরঞ্জাম জব্দ করা হয়। জব্দ করা ৩০ কেজি মাংস আদালতের অনুমতিতে রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
এসিএফ জয়নাল আবেদীন আরো জানান, শিকারিদলের মূলহোতা পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামের এফরান গোমস্তার ছেলে মালেক গোমস্তা (৫৫) পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে বন বিভাগ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। দুই মাস আগে সে জেলে থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় হরিণ শিকারের কাজে লিপ্ত হয়। এফরান গোমস্তাও সুন্দরবনেও কুখ্যাত কাঠ ও হরিণ শিকারি হিসেবে পরিচিত।