সমুদ্র উত্তাল করে ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’

বাংলাদেশের উপকূল থেকে দূর সমুদ্রে ঘূর্ণি বাতাস প্রবল হতে শুরু করলেও এখনো পুরোপুরি জন্ম নেয়নি ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তবে ক্রমেই তা তীব্রতা বাড়াতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এটির শক্তি বাড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ রয়েছে সেখানে। সমুদ্র উত্তাল করে সেখানে ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড়টি।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রবল হতে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠছে। তবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় স্পষ্ট হয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি।

আন্দামান সাগরের উপর নিম্নচাপের ফলে ওই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বাতাস বইবে। নিম্নচাপ অঞ্চল এবং ভারতীয় উপকূলরেখার মধ্যে সমুদ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। ফলে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তা দ্রুত শক্তি বাড়াতে সক্ষম।

এদিকে ধেয়ে আসা বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তিস্থল ও গতিপথ নিয়ে আবহাওয়াবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শুরুতে এটি ভারতের উপকূল হয়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। মঙ্গলবারের পর তার গতিপথ কোনদিকে পরিবর্তন করে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ এর প্রভাবে রোববার ভোর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট মেঘের ঘনঘটায় শুরু হয় হালকা বৃষ্টি, যা মুষলধারে রূপ নেয় সকাল পর ৯টার পর।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বৃষ্টি আরো ২দিন অব্যাহত থাকতে পারে। একটানা  বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা থাকলেও এ মৌসুমে তার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ।

তিনি বলেন, বজ্রসহ বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া থাকবে ২ দিন। এটি মৌসুমি বৃষ্টি। ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের বেশ কিছু এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। সেটি দেশের উপকূলীয় পটুয়াখালি, বরিশাল, বরগুনা, লক্ষীপুর ও ফেনীতে  ক্যাটাগরি-৪ মাত্রার শক্তি নিয়ে আঘাত করতে পারে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-৩ মাত্রার হবে এবং ক্যাটাগরি-২ মাত্রার শক্তি নিয়ে সুন্দরবনে আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এবং যতই উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হবে ততই শক্তি অর্জন করতে থাকবে। এটি উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করতে পারে-এমন পর্যবেক্ষণও রয়েছে।

আবার আরেকটি পর্যবেক্ষণ বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান দীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্টি হয়ে খুব দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল ঘেঁষে উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হবে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্যাটাগরি-৪ মাত্রার শক্তি নিয়ে আঘাত করতে পারে। এরপর সামান্য কিছুটা পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর দিকে বাঁক নিতে পারে এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে (ক্যাটাগরি ৩ প্লাস) পরিণত হতে পারে।

সর্বশেষ আগামী ১২ ও ১৩ মে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বরিশাল পর্যন্ত যেকোনো এলাকা অতিক্রম করতে পারে। উপকূল অতিক্রমের পূর্বে কিছুটা দুর্বল হতে পারে।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের ‘আম্ফান’ নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড। ‘আম্ফান’ ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় তালিকার শেষ নাম।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)