সুস্থ হয়ে বললেন রোগী, করোনা জয় সহজ ছিলো না

রুমন, এনাম ও মনির হোসেন। তিনজনই সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউপির ইছামতি আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা। ১৪ এপ্রিল করোনা শনাক্তের পর চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান তারা।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করোনা জয়ের গল্প ও সমাজের কিছু মানুষের মনুষ্যত্বহীনতার কথা তুলে ধরেন রুমন।

‘করোনা মানেই মৃত্যু নয়, সচেতনতায় মিলে মুক্তি’ শিরোনামে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন পশ্চিম ঢেমসা আলীনগর গ্রামের হতভাগা পাঁচ করোনা রোগীর গল্প লিখেন তিনি। তিনি জানান, প্রথমেই মহান আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি এবং বিনম্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারনে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সম্ভব হলো।

চট্টগ্রাম জেলায় করোনা যুদ্ধ জয় করা সাতকানিয়ার প্রথম তিনজন আমরা। দীর্ঘ ১৪ দিন লড়াই করেছি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্গে। তিনবার নমুনা পরীক্ষার পর, অবশেষে আল্লাহর রহমতে করোনা যুদ্ধ জয় করে আমরা তিনজন ঘরে ফিরছি। আশাকরি অন্যরাও দুই একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন।

করোনায় আজ সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের মত এই গরিব দেশে, করোনা জয় সহজ ছিলো না। প্রতিটা দিন আমরা মৃত্যু ভয়ের মধ্যে ছিলাম। অপ্রিয় হলেও সত্য, সবাই কেন জানি আমাদের ঘৃণা করা শুরু করছিলো। যেন আমরা মহা কোনো পাপকাজ করেছি। উপলব্ধি করেছি, বাস্তবতা কতই নিষ্ঠুর। করোনায় রোগী মরার আগে, মানুষের ঘৃণা অবহেলায় হাজার বার মরে। কারো করোনাভাইরাস হয়েছে, তার মানে এই নয় যে সে বিশাল কোনো পাপ করে ফেলেছে।

করোনা পজিটিভ হওয়ার পরে আমদের পাঁচজনকে যেদিন বাড়ি থেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, আমাদের মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিলো আজ মনে হয় বাড়ির শেষদিন। হয়তো আর কোনোদিন পরিবার পরিজন কারোর সঙ্গে দেখা হবে না, আর কোনোদিন বাড়ি ফেরা হবে না। হতভাগা কাকে বলে সেদিন বুঝেছি। সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে করে শহরে পৌঁছাতে পারিনি। খবর এলো আমাদের পাঁচজনের বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও বাড়ির লোকজনদের উপর হামলা হয়েছে। অপরাধ, পাপিষ্ঠ করোনা রোগীর। দুঃখে, কষ্টে, কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছিলো।

চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছার পর আশার আলো দেখালেন কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা। মনে বাঁচার আশার সঞ্চার হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আমি মনে করি তা বর্তমান বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়। সরকারি চিকিৎসার মান, মেডিসিন সরবরাহ, ডাক্তার ও সেবকগণের আন্তরিকতায় প্রতিটি করোনা রোগী সুস্থ হওয়া অসম্ভব কিছুই নয়।

আমরণ কৃতজ্ঞ থাকবো বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। যার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি। তারাই দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই যুদ্ধে আমাদের জিতিয়েছেন। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন এই করোনো নামক প্রাণঘাতী রোগ থেকে সবাইকে হেফাজত করেন।

এদিকে, রুমনের দেয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাসে অনেকেই তাদের অভিনন্দন ও দোয়া জানিয়েছেন। অনেকেই আবার তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মমতার প্রতিবাদ জানান।

নেজাম আনিস নামে একজন লিখেছেন- আপনাদের কারো সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই। তারপরও নিজ থানার মানুষ হিসেবে খুব কষ্ট লেগেছে। বেশি কষ্ট লেগেছে বাড়িতে হামলা করেছে সংবাদটা শুনে। যাই হোক, আল্লাহর রহমতে আপনারা বেঁচে গেলেন। লক্ষ কোটি শুকরিয়া জানাই মহান রবের দরবারে।

মোহাম্মদ আকতার হোছাইন নামে একজন লিখেছেন- করোনা এইডস রোগ নয়, যেকোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। তাকে ঘৃণা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না।

আবু সুফিয়ান নামে একজন লিখেছেন- খুশি হলাম এবং মনকে শান্তনা দিতে পারলাম। করোনা হলে মৃত্যু নয়। মানুষের ভালোবাসা পেলে করোনা নামক মহামারীকে জয় করা সম্ভব।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)