চেয়ারম্যান ডালিমসহ তার সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ
সাতক্ষীরার আশাশুনির গদাইপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চেয়ারম্যান ডালিমসহ তার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের হয়েছে। নিহত সরবত মোল্যার ছেলে সবুজ মোল্যা বাদি হয়ে গত শনিবার আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমকে প্রধান আসামী করে ৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ইতিমধ্যে এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন, চেয়ারম্যান ডালিমের ভাই আব্দুস সালাম বাচ্চু, জুলফিকার আলী জুলি, বাচ্চুর ছেলে কাইয়ুফ, একই গ্রামের জামসেদ মোল্যা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরদার, মফিজুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, শামীম হোসেন, রিপন সরদার ও স্বপন মন্ডল।
এদিকে, চেয়ারম্যান ডালিমের ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদী হয়ে তার অপর ভাই গুরুতর আহত টগরকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে মর্মে সোমবার অপর মামলাটি দায়ের করেন। এতে সাবেক চেয়াম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল কুদ্দুসকে প্রধান আসামী করে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার অন্য আসামীরা হলেন, গদাইপুর গ্রামের অহিদুল, মমিন মোল্যা, শিমুল, আনারুল ইসলাম, ফেরদৌস হোসেন, হারু মোড়ল, মফিজুল, সবুজ, মনজু মোল্ল্যা, কামরুল সরদার, জাকিরুল মোল্ল্যা, রব্বানী মোল্ল্যা, প্রিন্স, রবিউল, রাসেল, নূরুজ্জামান মোল্ল্যা (মুকুল), হাফিজুল, জামিনদার, আসাদুজ্জামান, কালাম, আক্তার মোল্ল্যা, নরিম মোল্ল্যা, হাসান ও ইসমাইলসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জন।
এদিকে, গত রোববার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) ইলতুৎ মিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এসময় নিহত সরবত মোল্যার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী শেফালী খাতুনসহ পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেন। সেখান থেকে তিনি চেয়ারম্যান ডালিমসহ তার কর্মী-সমর্থকদের যেসব বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে সে সব জায়গাও পরিদর্শন করেন। তিনি এ সময় ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। তিনি এ সময় তাদেরকে বলেন, আপনাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এজন্য আপনারা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য, সরবত মোল্যার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে চেয়ারম্যান ডালিম ও তার দশ কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে নিহতের স্বজনসহ তার সমর্থকরা।
চেয়ারম্যান ডালিমের স্ত্রী রেহনো পারভীন আঁখি জানান, হত্যা ও নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামী সরবত মেল্যা মারা যাওয়ার পর তার (আঁখির) বাড়িসহ বাড়িতে থাকা ৫টি মোটর সাইকেল ও মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়। এছাড়া নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও দলিলসহ সকল মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এতে তার এক কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। এতেই তারা ক্ষ্যান্ত হননি তারা তার ৭ বছরের শিশু পুত্র আল-মিশকাতকে মারপিট করে তাকে অপহরনের চেষ্টা করে এবং হুমকি ধামকি অব্যাহত রাখে। একপর্যায়ে তিনি পুলিশের সাহায্য নিয়ে এলাকা ছেড়ে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সেখানে চলছে লুটতরাজ। চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকদের মৎস্যঘেরের মাছসহ বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, টাকা পয়সা লুটপাট করা হচ্ছে। কয়েকটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতেও তারা লুটপাট চালিয়েছে। এখনও তাদের মহড়া অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি আরো জানান।
আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরন চক্রবর্তী জানান, চেয়ারম্যান ডালিমসহ তার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে যেভাবে লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়েছে তা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এখন সেখানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে এবং পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।