সেপ্টেম্বরের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন: অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের ঘোষণা
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত হবে বলে আশা দেখিয়েছেন বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানী। ব্রিটিশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, তার দল করোনার একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে।
শনিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমসকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে অধ্যাপক সারাহ বলেন, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে তিনি ৮০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী এবং আগামী সেপ্টেম্বরের আগে এটি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেন, এটি শুধু অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী দলের জন্য পূর্বাভাস নয়। প্রত্যেকটি সপ্তাহ চলে যাচ্ছে, আমাদের আরও অনেক ডাটা দেখতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক ডজন বিজ্ঞানী করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজের দলকে সবচেয়ে অগ্রসর বলে দাবি করেন অক্সফোর্ডের এই বিজ্ঞানী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ সারাহ গিলবার্ট।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৫টি কোম্পানি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের ওপর প্রয়োগ শুরু করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক প্রয়োগের খুব কাছাকাছি চলে আসার কথা বলেছে।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্রিটেনে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে লক ডাউন চলছে। বিশ্বের শতাধিক দেশেও লক ডাউনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কঠোর-বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক কিংবা ভ্যাকসিন না থাকায় বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
সেপ্টেম্বরের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে একটু স্বস্তি তৈর করছে। গিলবার্ট বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গিলবার্ট। তিনি বলেছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের চূড়ান্ত ফল এলেই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এই ভ্যাকসিনের উৎপাদনের ব্যয় এবং উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। যদি কাজ করে, তাহলে ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সফলতা আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অক্সফোর্ডের এই অধ্যাপক।
ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানী এমন এক সময় করোনার ভ্যাকসিন আনার ঘোষণা দিলেন যখন বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে এক লাখের বেশি প্রাণ। চীন থেকে ২২০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ লাখের বেশি মানুষ।
বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৩ হাজার ১৭৭ এবং মারা গেছেন ১৮ হাজার ৭৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় প্রাণ গেছে ২ হাজার ১০৮ জনের; যা যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশে উহানে প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হয় দেশটির সরকার। দেশটিতে এই ভাইরাস ৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কাড়লেও বিশ্বে সেই সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৯০১। এছাড়া বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৮১৫ জন।
সূত্র: ব্লুমবার্গ, দ্য টাইমস।